অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গতি আনতে প্রতি জেলায় হচ্ছে ক্রিমিনাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট

বাংলাদেশ পুলিশের মনোগ্রাম

৬জুলাই২০২৪

অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গতি আনতে পুলিশের ৬৪ জেলা ইউনিটসহ সব ইউনিটে ক্রিমিনাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (সিআইইউ) গঠন করা হচ্ছে। প্রতিটি জেলা পুলিশের প্রধান ও মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই ইউনিট গঠনের। বিজ্ঞানভিত্তিক তদন্ত, প্রযুক্তি ও অনুসন্ধানে দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের সিআইইউ ইউনিটে যুক্ত করা হবে। অপরাধীদের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে মামলার তদন্তে সহায়তা দেবে এই ইউনিট। এছাড়া এলাকাভিত্তিক হুন্ডি ও মাদকের মতো অপরাধ প্রতিরোধে বিশেষ গুরুত্ব দেবে সিআইইউ। তবে সরাসরি কোনও অভিযানে এই ইউনিট অংশ নেবে না। পুলিশের সব ইউনিটকে তারা তথ্য সরবরাহ ও অপারেশন পরিকল্পনা তৈরি করে দেবে।

সম্প্রতি পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন প্রতি জেলা ও মেট্রোপলিটান পুলিশে ক্রিমিনাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট গঠনের নির্দেশ দেন। আইজিপি স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, সকল জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশের নিজ নিজ ইউনিটে প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রশিক্ষিত জনবলসহ ক্রিমিনাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট গঠন করবেন। এই ইউনিট গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানভিত্তিক তদন্তে তদন্তকারী ও তদন্ত তদারককারী কর্মকর্তাকে সহায়তা করবে।আইজিপির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সংঘবদ্ধ প্রতারণা, মাদক ও মানবপাচার মামলার মুখ্য আয়ভোগী বা মূল হোতাকে চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট অপরাধীর বিরুদ্ধে মামলা করার পাশাপাশি মানিলন্ডারিং মামলায় তদন্তকালে অপরাধ থেকে পাওয়া আয় ও অর্জিত সম্পত্তি জব্দ নিশ্চিত করতে হবে। ইউনিট প্রধানরা নিজেসহ তার ইউনিটের তদন্তকারী ও তদন্ত তদারককারী কর্মকর্তাকে প্রতিবছর ন্যূনতম ৬০ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করবেন। সকল তদন্ত ও তদন্ত তদারককারী কর্মকর্তা অবশ্যই ব্যক্তিগতভাবে সিডিএমএস ও সিডিএমএস প্লাসহ সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন। জিডি, এজাহার, আসামির ফরওয়ার্ডিং, রিমান্ড আবেদন, অনুসন্ধান স্লিপ ও চূড়ান্ত পুলিশ প্রতিবেদন সফটওয়্যারের মাধ্যমে করতে হবে। ডিজিটাল ফরেনসিক আলামত জব্দ করে সংশ্লিষ্ট আইটি বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠাতে হবে। ডিএনএ আলামতসহ অন্যান্য আলামত উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করে সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিশেষজ্ঞের মতামতের জন্য পাঠানো নিশ্চিত করতে হবে।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জেলায় জেলায় ক্রিমিনাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট গঠন করা সম্পন্ন হলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গতি পাবে। এজন্য তারা প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানভিত্তিক তদন্তে দক্ষ পুলিশ সদস্যদের নিয়ে সিআইইউ গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছেন। জেলা পুলিশের সদস্যদের মধ্য থেকে তালিকা তৈরি করে তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই ইউনিটের কাজ শুরু করবে।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে অপারেশনাল ইউনিটকে সরবরাহ করবে সিআইইউ ইউনিট। তবে সিআইইউ ইউনিটের সদস্যরা মাঠে কোনও অপারেশন চালাবে না। তারা অপরাধ প্রতিরোধে অপারেশন চালানোর জন্য তথ্য, বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তি দিয়ে সহায়তা করবেন।

কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজুল ইসলাম জানান, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও বিজ্ঞানভিত্তিক তদন্তে দক্ষ পুলিশ সদস্যদের বাছাই করে জেলায় সিআইইউ ইউনিট গঠন করার প্রক্রিয়া চলছে। তারা জেলার গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের সহায়তা করবে। এছাড়া অপারেশনাল টিমগুলোকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে।

একাধিক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিআইইউ ইউনিটের জন্য আলাদা করে কোনও জনবল দেওয়া হচ্ছে না। নিজেদের জনবল থেকে বাছাই করে এই ইউনিট করা হচ্ছে। যারা প্রাথমিকভাবে একটি সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে এই ইউনিটে কাজ করবেন। ধীরে ধীরে প্রশিক্ষণ ও কাজের মাধ্যমে তারা দক্ষ হয়ে উঠবেন। তবে সিআইইউ ইউনিটের জন্য বাড়তি জনবল দিলে ভালো হতো। বাড়তি জনবল না পাওয়ায় অন্যান্য যেসব ইউনিট থেকে লোকজন আনা হবে, সেখানে দক্ষ জনবলের ঘাটতি দেখা দেবে। আর পুলিশ এমনিতেই প্রয়োজনীয় জনবলের তুলনায় কম জনবল নিয়ে কাজ করে। ফলে বাড়তি জনবল না পেলে এই ইউনিটের মাধ্যমে জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশ কতটা লাভবান হবে সেটা কার্যক্রম শুরুর পর বোঝা যাবে।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম জানান, সিআইইউ ইউনিটের কাজ হবে তদন্ত কর্মকর্তাকে সহযোগিতা ও অপরাধ নিয়ে বিশ্লেষণ করা। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে অপরাধের ধরণ নিয়ে গবেষণা জরুরি। অপরাধের ধরণ ও প্রধান কারণগুলো ফাইন্ডআউট করতে পারলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, অপরাধের ধরণ ও কারণ বিশ্লেষণ করে সিআইইউ ইউনিট তদন্ত কার্যক্রমসহ পুলিশের অপারেশনাল কাজকে সহযোগিতা করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *