জরুরি বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন
অভিযান চালিয়ে হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে ত্রুটি থাকলে সেটা সংশোধন করা হবে বলেও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ কাজে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে অভিযান চলবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাম্প্রতিক সংকট নিয়ে জরুরি বৈঠকের পর মন্ত্রণালয়ের অবস্থানের কথা তুলে ধরেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম।বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা অতীতের কথা এখন টানবেন না। আমি এখন থেকে যা করবো, সেখানে যদি দেখেন যে কিছু হচ্ছে না, তখন আমাকে জিজ্ঞেস করবেন। আগেও বলেছি এখনও বলছি, অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিষয়ে আমি জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করি। কাউকে ছাড় দেবো না। যার যে যোগ্যতা সে সেখানেই কাজ করবে, এর বাইরে কিছু না।’
অবৈধ ক্লিনিক বন্ধে সবার ভূমিকা লাগবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যত অবৈধ ক্লিনিক চলমান সব তো বন্ধ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। এখানে সবার ভূমিকা লাগবে। এখানে সংসদ সদস্যদেরও কাজ করতে হবে। সবাই মিলে সামগ্রিকভাবে যদি অভিযান চালানো যায়, তাহলে এটা সম্ভব। আজ যশোর, দিনাজপুরে হঠাৎ করে একটা হাসপাতাল বন্ধ করে দিলে সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাবে। সবদিকেই আমাকে দেখতে হবে। সার্ভিস রাখবো, তবে মানসম্পন্ন সার্ভিস। খতনা করতে গিয়ে একটা শিশু মারা গেলো, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু আছে বলে আমি মনে করি না।’
এ সময় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হাইকোর্টে ১ হাজার ২৭টি অবৈধ ক্লিনিকের তালিকা দেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরে মাঠ পর্যায়ে প্রত্যয়ন আনা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান বন্ধ করলে হবে না, সেটা মনিটর করতে হবে। বন্ধ করে দেওয়ার পর ভেতরে ভেতরে কাজ হচ্ছে কিনা এটাও দেখা জরুরি।’
সঠিক ব্যবস্থাপনায় হাসপাতালগুলো পরিচালিত হচ্ছে কিনা–এ বিষয় তদারকি করতে অভিযান শুরু হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে অভিযান শুরু হবে।’ একইসঙ্গে হাসপাতাল ও চিকিৎসকের গাফিলতিতে কোনও শিশুর মৃত্যু হলে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘জেলা ও উপজেলায় কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত সব জায়গায় এককভাবে করা যায় না। পুলিশ লাগে, ম্যাজিস্ট্রেট লাগে। এসব জোগাড় করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হয়। ঢাকায় পুলিশের কাছে ফোর্স চাওয়া হলে হয়তো দিচ্ছে, কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট দেখা গেলো দুই জন আছে। তারা অন্য কাজে ব্যস্ত। সুতরাং সব বিষয়ে বিবেচনা করে কিন্তু আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বেসরকারি মেডিক্যালের ব্যবসার বিপক্ষে না। প্রাইভেট সেবা আরও সুদৃঢ় হোক, আরও সুন্দরভাবে চলুক আমরা সেটা চাই। সে ক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য হলো, যে মান, যন্ত্রপাতি, চিকিৎসক সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার, সেগুলো থাকতে হবে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) জানিয়েছে, ইতোমধ্যে অনেক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবাই মিলে আমরা প্রাইভেট প্র্যাকটিসকে সুদৃঢ় করবো। আমরা কারও ব্যবসা বন্ধ করতে চাই না। সরকার এটা চায় না। কারণ চাহিদা অনুযায়ী আমরা সরকারি পর্যায়ে সবাইকে সেবা দিতে পারছি না। যাদের সামর্থ্য আছে তারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা নেবে। আমরা সুদৃঢ় করতে চাই, সে জন্য যে অ্যাকশন নেওয়ার সেটা নিয়ে আমরা এগোবো। চিকিৎসকরা যারা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন তাদেরও সোচ্চার হতে হবে। সুযোগ-সুবিধা যেটা থাকার কথা, না থাকলে তারা সেখানে কাজ করবেন না।’
সভায় আরও ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, বিএমডিসি সভাপতি অধ্যাপক ডা মাহমুদুল হাসান, বিএসএমএমইউ’র অ্যানেস্থেসিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর দেবব্রত বণিক, ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিওলজি বিভাগের প্রধানসহ মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।