দুই বছরের খেলাপি ঋণকে অবলোপন করা যাবে

বাংলাদেশ ব্যাংক (ফাইল ছবি)

যেসব ঋণ হিসাব একাদিক্রমে ২ বছর মন্দ ও ক্ষতিজনক মানে শ্রেণিকৃত রয়েছে সেগুলো অবলোপন করা যাবে। অর্থাৎ ঋণখেলাপির মূল তালিকা থেকে সরিয়ে তাদের আলাদাভাবে তালিকাভুক্ত করা হবে।

রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা জারি করেছে।এতে বলা হয়েছে, ঋণের শ্রেণিমান যাই হোক না কেন, কোনও মৃত ব্যক্তির নিজ নামে অথবা তার একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে গৃহীত ঋণ হিসাব ব্যাংক স্বীয় বিবেচনায় অবলোপন করতে পারবে। তবে, একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির উপার্জনক্ষম উত্তরসূরি রয়েছে কিনা তা বিবেচনায় নিতে হবে। পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়া কোনও ঋণ হিসাব অবলোপন করা যাবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য ঘোষিত কর্মকৌশল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা অনুসরণকরত অনাদায়ী ঋণ হিসাব অবলোপন এবং অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের লক্ষ্যে এই নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে অবলোপনকৃত ঋণ আদায় ইউনিট গঠন করতে হবে। আর ইউনিট গঠনের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা উক্ত ইউনিটে বহাল করতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, অবলোপনকৃত ঋণের বিপরীতে আদায়কৃত অর্থের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ প্রণোদনা হিসেবে অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে বিতরণযোগ্য হবে। বিতরণযোগ্য অর্থের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রাপ্য হবেন। অবশিষ্ট অর্থ অবলোপনকৃত ঋণ আদায় ইউনিটের প্রধানসহ উক্ত ইউনিটের অন্যান্য কর্মকর্তা প্রাপ্য হবেন।

ঋণ হিসাব অবলোপন পদ্ধতি

১. অবলোপনযোগ্য ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের অনুকূলে বন্ধককৃত সম্পত্তি (যদি থাকে) নিয়মানুগভাবে বিক্রয়ের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হলে এবং ব্যাংকে নিশ্চয়তা প্রদানকারী ব্যক্তি/ব্যক্তিদের নিকট থেকে পাওনা অর্থ আদায়ে সমর্থ না হলে উক্ত ঋণ অবলোপনের আওতায় আসবে।

২. অবলোপনের জন্য নির্বাচিত ঋণ হিসাবগুলোর ক্ষেত্রে পূর্বে আইনগত ব্যবস্থা সূচিত না হয়ে থাকলে অবলোপনের পূর্বে অবশ্যই অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে হবে। তবে অর্থঋণ আদালতে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে মামলাযোগ্য না হলে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ এবং মৃত ব্যক্তির নিজ নামে অথবা তার একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে গৃহীত যেকোনও অঙ্কের ঋণ মামলা দায়ের ব্যতিরেকে অবলোপন করা যাবে।

৩. অবলোপনের পূর্বে সংশ্লিষ্ট ঋণ হিসাবের স্থিতি থেকে শুধু রক্ষিত স্থগিত সুদ বাদ দেওয়ার পর অবশিষ্ট ঋণস্থিতির সমপরিমাণ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। এক্ষেত্রে অবলোপনের জন্য চিহ্নিত প্রতিটি ঋণ হিসাবের বিপরীতে রক্ষিত প্রভিশন পর্যাপ্ত না হলে ব্যাংকের চলতি বছরের আয় খাত বিকলন করে অবশিষ্ট প্রভিশন সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।

৪. কোনও ঋণ হিসাব আংশিকভাবে অবলোপন করা যাবে না।

৫. পরিচালনা পর্ষদের (বাংলাদেশে কার্যরত বিদেশি ব্যাংকের ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের পরিবর্তে স্থানীয় সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের) অনুমোদন ছাড়া কোনও ঋণ হিসাব অবলোপন করা যাবে না।

অবলোপনকৃত ঋণ হিসাব রিপোর্টিং পদ্ধতি

অবলোপনকৃত ঋণের হিসাব একটি পৃথক লেজারে সংরক্ষণ করতে হবে এবং ঋণ অবলোপন করা হলেও সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা তার ঋণের দায় পরিশোধ না করা পর্যন্ত যথানিয়মে খেলাপি ঋণগ্রহীতা হিসেবে চিহ্নিত হবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *