মুক্তিযোদ্ধাদের বয়সসীমা নির্ধারণ প্রশ্নে আপিলের অনুমতি পেল রাষ্ট্রপক্ষ

ঢাকা: মুক্তিযোদ্ধাদের নূন্যতম বয়স নির্ধারণ করে সরকারের জারি করা তিনটি গেজেট ও পরিপত্র অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিল করার অনুমতি দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করে রোববার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।

একই সঙ্গে হাইকোর্টের রায়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দিয়েছেন।

আদালতে আবেদেনর পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

রিট আবেদনকারীপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন ও ওমর সাদাত।

মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ৬ মাস এবং ১৩ বছর নির্ধারণ নিয়ে করা পৃথক ১৫টি রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ১৯ মে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ করে সরকারের জারি করা তিনটি গেজেট ও পরিপত্র অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন।

ওই রায়ে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০১৮ এর সংজ্ঞা সংক্রান্ত ২ ধারার ১১ উপধারা অবৈধ ঘোষণা করেছেন।

এছাড়া রায় পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধদের সম্মানী পরিশোধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল লিভ টু আপিল করে।

হাইকোর্টের রায়ের পর ওমর সাদাত সাংবাদিকদের বলেছিলেন, যারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত এবং মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে আসছিলেন, কোনো রকম কারণ দর্শানের নোটিশ ব্যতিরকে তাদের ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাদেরকে অমুক্তিযোদ্ধা বলা হয়। বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের বয়স ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১২ বছর ৬ মাস হয়নি তারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবে না।

আমরা সমস্ত আইনকানুন কোর্টের সামনে পেশ করি, কোর্ট সমস্ত দেখে রায় দিয়েছেন। সংবিধান এবং বঙ্গবন্ধুর ভাষণেও দেখবেন তিনি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধ ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেছিলেন। সেখানে বয়সের কোনো বিধান ছিল না। আমাদের যিনি বীর প্রতীক ছিলেন শহীদুল ইসলাম লালু, মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ১০ বছর। বঙ্গবন্ধু তাকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন এবং বীর প্রতীক খেতাব দিয়েছিলেন। সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে তিনি বীর প্রতীক তো ননই, তিনি আজ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেও বিবেচিত হবেন না।

আইনজীবীরা জানান,২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর ‘মুক্তিযোদ্ধা এর সংজ্ঞা ও বয়স নির্ধারণ’ করে গেজেট জারি করা হয়।

ওই গেজেটে বলা হয়, ‘মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নতুন ভাবে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে ন্যূনতম ১৩ বছর হতে হবে।

এরপর ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি একটা পরিপত্রের মাধ্যমে সে গেজেট সংশোধন করে বলা হয়,১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১২ বছর ৬ মাস।

ওই দুটি গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৬,২০১৭ ও ২০১৮ সালে মুক্তিযোদ্ধার হাইকোর্টে পৃথক পৃথক রিট দায়ের করেছিলেন।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *