কলকাতা বইমেলায় পালিত হয়েছে বাংলাদেশ দিবস

কলকাতায় সংযোগের সেতুবন্ধন: সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিল্পের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার।

কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ দিবস পালিত হয়েছে। শনিবার (২০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বইমেলা প্রাঙ্গণে এসবিআই অডিটরিয়ামে এই দিবস পালন করা হয়েছে।

‘সংযোগের সেতুবন্ধন: সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিল্পের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব খলিল আহমদ।প্রধান আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক চিন্ময় গুহ, বিশিষ্ট কবি ও পশ্চিমবঙ্গ কবিতা অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান সুবোধ সরকার।

আলোচক হিসেবে ছিলেন বাংলা অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, বিশিষ্ট নাট্যকর্মী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, বরেণ্য সংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।

সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিবিদ চট্টোপাধ্যায়, গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশু শেখর দে, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ।

কবি সুবোধ সরকার বলেন, হাওয়া ছবি দেখার জন্য রবীন্দ্রসদনে লম্বা লাইন। কি করে হল? কারণ একটা ভালো গান ভালো ছবি যতটা  বন্ধন করতে পারে তা অন্য কিছু পারে না। পশ্চিমবঙ্গে বাংলা কোনোদিন হারিয়ে যাবে না কারণ পাশেই আছে বাংলাদেশ। একটা ভালো গান যেমন এপার থেকে ওপারে যায়, তেমনি ওপারের গান চলে আসে এপারে। আজকে দর্শকরাই সেই টানেই এখানে ছুটে এসেছেন।

তিনি আরও বলেন, এই বইমেলায় বহু দেশের বই, পাঠক, প্রকাশক এসেছে। এই মুহূর্তে গোটা বিশ্ব একটা ঘটনার দিকে তাকিয়ে আছে। সেটা হচ্ছে রাম মন্দির। এই বই মেলা রাম মন্দিরকে চ্যালেঞ্জ। এই বইমেলা নতুন করে মানুষকে গড়ে তুলবে।

মাজহারুল ইসলাম বলেন, বইমেলায় একদিনকে বেছে নেওয়া হয় বাংলাদেশ দিবস হিসেবে। এই দিনটা মিনি বাংলাদেশে পরিণত হয়। বই মেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণের মাধ্যমে লেখক-সাহিত্যিকদের সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে।

সুধাংশু দে বলেন, বই মেলার শুরুতেই অনেক প্রকাশক এসেছেন। প্রচুর বই এখানে আসছে। বাংলাদেশের সাথে পশ্চিমবঙ্গের ভাষা, সাহিত্য এক। তাই বাংলাদেশ দিবস। এই আদান প্রদানটা খুব জরুরি। বাংলাদেশ বইমেলা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বইমেলাতেও কলকাতা একটা স্টল থাক।

ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেন, সাহিত্য সংযোগের মাধ্যম হতে পারে বই। এই সংযোগ তখনই মধুর হবে যখন বইয়ের আদান-প্রদান হবে। আমরা চাই বইয়ের আদান-প্রদান হোক।

চিন্ময় গুহ মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করে বলেন, আমরা সংস্কৃতির সেতুর উপর দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের অস্ত্র ও জাদুর লন্ঠন হল বই। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র বই। আনন্দ বা জ্ঞান লাভের জন্য বই নয়, বাঁচার জন্য বই পড়ুন। এমন বই পড়তে হবে যা আমাকে কামড়াবে। যে বই জমাট বরফ ভাঙার জন্য তৈরি হয়েছে। ইন্টারনেট থাকলেও বই পড়তে হবে

রেজোওয়ানা বন্যা চৌধুরী বলেন, ১৯৭৫ সালে আমি শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় পড়তে গিয়েছিলাম। কিন্তু কখনই মনে হয়নি অন্য দেশে এসেছি। আমাদের দূরত্ব কোথায়? ভালো সময় সুখের সময় কেটেছে এই বাংলায়। এক ভাষায় কথা বলে, আনন্দ, দুঃখ সব কিছুই এক। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দূরত্ব কমছে। সেতু বন্ধন জোরালো হয়েছে। ইন্টারনেটের কারণে দূরত্ব বলে কিছু নেই।

কিন্তু আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এপার বাংলায় হিন্দি ও বাংলাদেশে পাশ্চাত্যের যে চাপ একসময় রবীন্দ্রনাথকেই না হারিয়ে ফেলি আমরা।

 নুরুল হুদা বলেন, বাংলা ভাষায় যত গ্রন্থ আছে তা অন্য ভাষায় আছে কি না জানা নেই। আমাদের একটা বিশ্ব ভাষা প্রয়োজন আর সেখানেই এই ভাষা সেই স্থান নিতে চলেছে। এটাই বই মেলার সার্থকতা।

রামেন্দ্র মজুমদার বলেন, ১৯৭১ সালে দুই দেশের মানুষের রক্তের মধ্যে দিয়ে নতুন করে সেতু বন্ধন রচিত হয়েছে। আমাদের দুই দেশের রক্তের সম্পর্ক মাঝে মধ্যে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ত্রিপুরায় বাংলা ভাষার চর্চা বাড়ানো উচিত।

খলিল আহমদ বলেন, ঢাকায় বইমেলায় কলকাতা স্টল দেওয়া যায় কি না সেটা নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানাবো। বইয়ের বিকল্প বই। সমাজের এক এক শ্রেণীর মানুষ এক এক ধরনের বই পড়ে থাকেন। বইমেলা বৃদ্ধি করছে বইয়ের চাহিদা। বইমেলা একজন লেখকের জীবিকা নির্বাহের তীর্থভূমি।

আলোচনা সভা শেষে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ছিল সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক-এর ‘আমার পরিচয়’ কবিতা অবলম্বনে বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির শিল্পীদের সমন্বয়ে একটি বিশেষ পরিবেশনা।

ইউনেস্কো ঘোষিত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রিকশা ও রিকশাচিত্র দিয়ে সাজানো হচ্ছে এবারের বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন। ৩,২০০ বর্গ ফুটের এই প্যাভিলিয়নে মোট ৪৫ টি (১২টি সরকারি ও ৩৩টি বেসরকারি) স্টল থাকবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *