কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ৬ জুলাই ২০২৪
রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের দুর্গতদের মাঝে খাদ্য সহায়তা (ছবি: বাংলা ট্রিবিউন)
উজানের ঢলে নদ-নদীর পানি বেড়ে কুড়িগ্রামে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার কবলে পড়েছে জেলার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। অথৈ পানিতে প্লাবিত বসতভিটায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বানভাসিরা। শুকনো স্থান আর গোখাদ্য সংকটে গবাদিপশু নিয়েও চলছে ভোগান্তি। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি সাহায্য বানভাসিদের একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জেলার সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, কুড়িগ্রামে ৭১টি নিবন্ধিত বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) রয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ‘ভাগ্যোন্নয়নের’ নামে তারা জেলায় বিভিন্ন তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে চলমান বন্যায় এই এনজিওগুলোর বানভাসিদের পাশে দাঁড়ানোর কোনও খবর পাওয়া যায়নি। খাদ্য কিংবা স্বাস্থ্যসেবা কোনও সহায়তা নিয়ে তারা এখনও বানভাসিদের কাছে যায়নি। চরাঞ্চলের দরিদ্রতাকে পুঁজি করে ফান্ড সংগ্রহ করা এই প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল।এনজিওদের কার্যক্রম দৃশ্যমান না থাকলেও মাঠ প্রশাসন বানভাসিদের সহায়তায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। নদ-নদীর পানি বেড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার পর থেকেই খাদ্যসামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় সকল পণ্য নিয়ে ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।
জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার তথ্যমতে, চলমান বন্যায় জেলা সদরসহ ৯ উপজেলার ৪৪টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছেন ৬২ হাজার ২০০ মানুষ । দুর্গত এসব মানুষের জন্য প্রতিদিন ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে মাঠ প্রশাসন। শুক্রবার (৫ জুলাই) রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. জাকির হোসেন কুড়িগ্রামের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে দুর্গতদের মাঝে খাদ্য সহায়তা দেন। এ সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ, পুলিশ সুপার (এসপি) আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলামসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শাখা সূত্রে জানা গেছে, প্লাবিত এলাকার জনপ্রতিনিধি ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা দুর্গত এলাকায় সশরীরে উপস্থিত থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে সরকারি সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন। বন্যাকবলিত ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর খাদ্য সহায়তা হিসেবে শুক্রবার পর্যন্ত ২৮১ মেট্রিক টন চাল এবং ৩ হাজার ৬৬৭ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৩৯৫ মেট্রিক টন চাল এবং ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার মজুত রয়েছে।
সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা জোরদার করা হলেও পানিবন্দি মানুষের পাশে নেই এনজিওগুলো। দুর্গত এলাকায় তাদের উপস্থিতি কিংবা সহায়তা বিতরণের কোনও খবর স্থানীয় প্রশাসনের কাছেও নেই।
জেলার সচেতন নাগরিকরা বলছেন, সরকারি, বেসরকারি এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সমন্বিতভাবে দুর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি। এমনকি ভেদাভেদ ভুলে রাজনৈতিক নেতাদেরও ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তা না হলে এই ধকল সামলে ওঠা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কুড়িগ্রামের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল কাদের বলেন, ‘দরিদ্রতাকে পুঁজি করে এ জেলায় এনজিওগুলো তাদের কার্যক্রম চালায়। কিন্তু বন্যার সময় তাদের দুর্গত মানুষের পাশে দেখা যাচ্ছে না। জনগণের জন্য কাজ করার নামে তারা কী করছে, তাদের আয়-ব্যয়সহ সকল কার্যক্রম খতিয়ে দেখা উচিত।’
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘জেলায় কার্যক্রম চালানো এনজিওগুলো দুর্গত মানুষদের সহায়তা করার কোনও দৃশ্যমান কার্যক্রম আমার নজরে আসেনি। তারা কেউ কোনও রিপোর্টও করেননি। তাদের ডাকা হয়েছে। দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য তারা কে কী করছেন তা জানতে চাইবো।’ তবে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফ দুর্গতদের জন্য বিভিন্ন সহায়তা দিয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।