গাইবান্ধার পাঁচটি আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস

গাইবান্ধার চারটি আসনে ছয় জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন

গাইবান্ধার পাঁচটি আসনে ৩৫ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে চারটি আসনে ছয় জন নারী প্রার্থী রয়েছেন। তাদের মধ্যে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন বর্তমান এমপি উম্মে কুলসুম স্মৃতি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মর্জিনা খান ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির আইরিন আক্তার। অপর তিন নারী প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ছয় নারীর মধ্যে তিন জনই হেভিওয়েট প্রার্থী। বাকি আসনটিতে নারী প্রার্থী না থাকলেও রয়েছেন স্বতন্ত্র একাধিক প্রার্থী। এ অবস্থায় জেলার সবগুলো আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন ভোটাররা। তবে শেষ মুহূর্তে কে বিজয়ের মালা পরবেন, তা নিয়েই এখন স্থানীয় মানুষের মধ্যে চলছে নানা বিশ্লেষণ।

ভোটের মাঠে থাকা ছয় নারীর মধ্যে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে তিন প্রার্থীরয়েছেন। তারা হলেন কল্যাণ পার্টির আইরিন আক্তার (হাতঘড়ি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মর্জিনা খান (আম) ও স্বতন্ত্র আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার (ঢেঁকি)। আসনটি জোটগত সিদ্ধান্তের কারণে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। শুরুতে এখানে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত সাবেক সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলামের বড় বোন আফরুজা বারীকে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান বারী। তবে বারীর মেয়ে আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এই আসনে এখন ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শামীম হায়দার পাটোয়ারীর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছেন নাহিদ নিগার। ভোটের মাঠে এই প্রার্থীর মধ্যে মূল লড়াই হবে—বলছেন ভোটাররা।জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার বলেন, ‘খুব কাছ থেকেই মা ও মামার রাজনীতি দেখেছি। মামা মঞ্জুরুল ইসলাম মানুষের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন। দলমত নির্বিশেষে মানুষ তাকে সমর্থন করেছেন। যেহেতু সুন্দরগঞ্জের মানুষের ভালোবাসা আছে, নিশ্চিতভাবে বলতে পারি আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন তারাগাইবান্ধা-২ (সদর) আসনে নারী প্রার্থী রয়েছেন মাসুমা আক্তার। স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুমার স্বামী শাহ সারোয়ার কবীর আসনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সারোয়ার সম্প্রতি সদর উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। নির্বাচনে সারোয়ার ট্রাক আর স্ত্রী মাসুমা ঈগল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আসনটিতে মাসুমা ও তার স্বামীসহ পাঁচ জন প্রার্থী লড়ছেন। এর মধ্যে জোটগতভাবে জাপার লাঙ্গল প্রতীকে লড়ছেন সাবেক এমপি আব্দুর রশিদ সরকার, জাসদের মশাল প্রতীকে গোলাম মারুফ মনা ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আম প্রতীকে জিয়া জামান খান। আসনটিতে প্রথমে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম। পরে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান

তিনি। ফলে লাঙ্গলের সঙ্গে সারোয়ার কবীরের মূল লড়াই হবে—বলছেন ভোটাররা।

গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ী) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হয়ে ভোটের মাঠে লড়ছেন উম্মে কুলসুম স্মৃতি। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী উম্মে কুলসুম ২০২০ সালে আসনটিতে উপনির্বাচনে এমপি হন। তিনি কৃৃৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক। স্মৃতির বিপরীতে আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১১ জন প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদুল্লাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাহারিয়া খাঁন বিপ্লব (ট্রাক), জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য মফিজুল হক সরকার (ঈগল), ওয়ার্ড আওয়ামী লীগেরআসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১১ জন প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদুল্লাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাহারিয়া খাঁন বিপ্লব (ট্রাক), জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য মফিজুল হক সরকার (ঈগল), ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আজিজার রহমান (ঢেঁকি), জাতীয় পার্টির মইনুর রাব্বী চৌধুরী (লাঙ্গল), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের এসএম খাদেমুল ইসলাম খুদি (মশাল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির জাহাঙ্গীর আলম (আম), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মনজুরুল হক (নোঙ্গর), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মাহমুদুল হক (হাতঘড়ি), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মোস্তফা মনিরুজ্জামান (গামছা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু জাহিদ নিউ (কেটলি)। তাদের মধ্যে নৌকার শক্তপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন সাহারিয়া খাঁন বিপ্লব, মফিজুল হক সরকার, আজিজার রহমান ও মইনুর রাব্বী চৌধুরী।

তবু জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী উম্মে কুলসুম স্মৃতি বলেন, ‘আসনটিতে ১১ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মানুষ নৌকা প্রতীকেই ভোট দেবেন। কারণ নৌকা উন্নয়নের প্রতীক, শেখ হাসিনার প্রতীক। আমি এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছি। দ্বাদশ নির্বাচনেও বিজয়ী হবো বলে শতভাগ আশা করছি।’

গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনে নারী প্রার্থী নেই। শুধুমাত্র তিন জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত আবুল কালাম আজাদ (নৌকা), জাতীয় পার্টির (জাপা) কাজী মশিউর রহমান ((নাঙ্গল) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আসনটির বর্তমান সংসদ সংসদ মনোয়ার হোসেন চৌধুরী (ট্রাক)। এখানে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন

গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনটি ছিল সাবেক ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার। ২০২২ সালের জুলাইয়ে তিনি মারা যাওয়ার পর আসনটিতে চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুতে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেও দলের টিকিট পেয়েছেন তিনি। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন ফজলে রাব্বী মিয়ার মেয়ে ফারজানা রাব্বী বুবলী, জাপার আতাউর রহমান সরকার (লাঙ্গল), আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র শামসুল আজাদ (ঈগল পাখি), বিকল্পধারার জাহাঙ্গীর আলম (কুলা) ও এনপিপির ফারুক মিয়া (আম)।

ছয় জনের মধ্যে একমাত্র নারী প্রার্থী বুবলী। আসনটিতে তার বাবা টানা ছয়বার

এমপি হওয়ায় বুবলীকে জয়ের ব্যাপারে এগিয়ে রেখেছেন ভোটাররা। ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় এই প্রার্থীর জন্য কাজ করছেন দলীয় নেতাকর্মীরাও। এখানে নৌকার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বুবলী, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী শামসুল আজাদ ও জাপার আতাউর রহমানের লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। 

জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে ফারজানা রাব্বী বুবলী বলেন, ‘এখানের মানুষ বাবাকে খুব ভালোবাসেন। বাবা তাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। বাবার জনপ্রিয়তার কারণে আশা করছি, দুই উপজেলার মানুষ সর্ব্বোচ্চ ভোট দিয়ে আমাকে এমপি নির্বাচিত করবেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *