জেলেদের চাল নিচ্ছেন মুয়াজ্জিন-কৃষক, ওজনেও কম

চাঁদপুর প্রতিনিধি

দুদকের টিমের অভিযান

চাঁদপুরে জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়ম ধরতে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নে জেলেদের মাঝে চাল বিতরণকালে সেখানে হাজির হয় দুদকের টিম। প্রাথমিক তদন্তে জেলেদের চাল কম দেওয়ার বিষয়টির সত্যতাও পায় দুদক।

জানা গেছে, সকাল থেকেই হানারচর ইউনিয়নে জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ শুরু হয়। বিতরণের এক পর্যায়ে সেখানে উপস্থিত হন চাঁদপুর দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালকের মো. আজগর হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম। এ সময় তারা প্রথমেই একাধিক চালের বস্তাসহ একটি ভ্যান জব্দ করেন। একে একে তারা বিভিন্ন জেলের সঙ্গে কথা বলেন। জেলেদের দেওয়া একাধিক চালের বস্তা ওজন দেওয়া হয়। তখন কয়েকটি বস্তায় চালের পরিমাণ কিছুটা কম দেখা যায়। এ সময় চাল বিতরণ বন্ধ হয়ে যায়। পরে দুদক টিম ইউপি চেয়ারম্যান সাত্তার রাঢ়ীর কাছে জেলের সংখ্যা ও চাল সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য জানতে চান এবং ভ্যানে থাকা একাধিক বস্তার কার্ডধারী জেলেকে আসতে বলেন।ওই চালের কার্ডধারীরা এলে তারা কে কী পেশায় আছে তা জানতে চান দুদকের কর্মকর্তারা। তখন দেখা যায়, এর মধ্যে মসজিদের মুয়াজ্জিন ও কৃষক আছেন।

এ বিষয়ে চাঁদপুর দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মো. আজগর হোসেন বলেন, ১৩ নং হানারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অভিযোগ ছিল ভুয়া জেলে কার্ড বানিয়ে চাল দেওয়া হচ্ছে এবং জেলেদের চালগুলো অন্য জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে। সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী কার্ডধারী জেলেরা যে চাল পাওয়ার কথা তা না দিয়ে চাল পরিমাণে কম দেওয়া হচ্ছে। আমরা কমিশনের অনুমোদনক্রমে দুদকের টিম এখানে আসি। এসে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। প্রত্যেক জেলে ৪০ কেজি করে চাল পাওয়ার কথা। পরে ইউনিয়ন পরিষদের রেজুলেশন অনুযায়ী ৩৬.৮০ কেজি করে দেওয়ার কথা। কিন্তু এখানে এসে দেখেছি জেলেদেরকে ৩১ থেকে ৩৫ কেজি চাল দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা এখানে যেসব ফাইন্ডিংস পেয়েছি, সেটি প্রতিবেদন আকারে কমিশন বরাবর দাখিল করবো। আমাদের হটলাইন ১০৬ নম্বরে ফ্রিতে কল করে অভিযোগ জানানো হলে কমিশনের অনুমোদনক্রমে আমরা ব্যবস্থা নেবো।

যা বলছেন ইউপি চেয়ারম্যান

হানারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাত্তার রাঢ়ী বলেন, ইউনিয়নে কার্ডধারী জেলে দুই হাজার ১৮১ জন। কিন্তু বরাদ্দ এসেছে দুই হাজার সাত জনের। সব জেলের জন্য চাল বরাদ্দ পাইনি। বরাদ্দ অনুযায়ী ১৭৪ জনের চাল কম পেয়েছি। গত বছরও ১৯২ জনের চাল কম এসেছিল, যেটি নিয়ে পরে সমস্যা হয়েছিল। তখন জেলেরা বলেছিল, যে চাল এসেছে তা সব জেলেকে ভাগ করে দেওয়ার জন্য। তাই এ বছর জেলেদের মতামতের বিষয়টি আমি ইউএনও স্যারকে জানিয়েছি। পরে ইউনিয়ন পরিষদের এ বিষয়ে রেজুলেশন করে প্রাপ্ত চাল সব জেলের মাঝে ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, এবার প্রায় সাত টন চাল কম এসেছে। যে চাল এসেছে সেটি ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে জেলেদের মতামতের ভিত্তিতেই। এখানে ওনারা (দুদক কর্মকর্তারা) এসে কয়েকটা বস্তা ওজন দিয়ে তার মধ্যে দুয়েকটিতে কিছুটা কম পেয়েছে। আবার কয়েকটিতে কিছুটা বেশি পেয়েছে। এর কারণ হচ্ছে- চালতো ওজন দিয়ে দেওয়া হয় না। চাল দেওয়া হয় বালতি মেপে। সে কারণে কিছুটা হয়তো কম বেশি হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *