বাংলাদেশের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ চায় ফিলিপাইন

বাংলাদেশ-ফিলিপাইন

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ফিলিপাইন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পর্যটন খাতে মনোযোগ বাড়িয়েছে। ২০২৩ সালের প্রথম ৯ মাসে ৪০ লাখ পর্যটক দেশটি ভ্রমণ করেছেন, যা ২০২২ সালে তুলনায় দ্বিগুণ। বাংলাদেশের পর্যটকদের আকর্ষণে সরাসরি আকাশপথে যোগাযোগ স্থাপন করতে চায় দেশটি।

সম্প্রতি পর্যটনে জোর দিয়েছে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ফিলিপাইন সরকার। ৭ হাজারের বেশি দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই রাষ্ট্রটি বিশ্ব পর্যটনের অন্যতম গন্তব্য। বিশেষ করে রাজধানী ম্যানিলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে। ঐতিহাসিক স্থাপনা ছাড়াও দেশটির পার্ক ও বিনোদন-কেন্দ্রিক নানা আয়োজন পর্যটকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ফিলিপাইনের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। দেশটিতে ভ্রমণে আগ্রহ রয়েছে বাংলাদেশি পর্যটকদেরও। তবে আকাশপথে সরাসরি যোগাযোগ না থাকায় অন্য দেশে ঘুরে যেতে হয়, এতে বেড়ে যায় যাতায়াত ব্যয়। ফলে আগ্রহ থাকলেও দেশটিতে অনেকেই যেতে চান না। তবে বাংলাদেশিরাও যেন সরাসরি ফিলিপাইনে যেতে পারেন, এ জন্য আকাশপথে যোগাযোগ স্থাপনে জোর দিয়েছে দেশটি। সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে ফ্লাইট চালু করার অনুরোধও জানিয়েছে।

ইনোগ্লোব ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাসলিম আমিন শোভন বলেন, ‘পর্যটকরা নিত্য নতুন গন্তব্যে যেতে চান। ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো নিয়ে অনেকের আগ্রহ আছে। তবে সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় যেতে সময় বেশি লাগে, খরচও বেশি হয়। থাইল্যান্ড থেকে কাছে হওয়ায় অনেকেই থাইল্যান্ডের পাশাপাশি কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামে ভ্রমণে যাচ্ছেন। সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে ফিলিপাইনেও পর্যটকদের যাত্রা বাড়বে। সেইসঙ্গে ফিলিপাইনে প্রচারণা চালালে বাংলাদেশেও দেশটি থেকে পর্যটকদের আকর্ষণ করা সম্ভব হবে।

জানা গেছে, শিকাগো কনভেনশন অনুযায়ী একটি দেশের সঙ্গে অন্য দেশের বাণিজ্যিক বিমান পরিবহনের জন্য এয়ার সার্ভিস অ্যাগ্রিমেন্ট অর্থাৎ বিমান পরিবহন চুক্তি থাকতে হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে ফিলিপাইনের এয়ার সার্ভিস অ্যাগ্রিমেন্ট থাকলেও সেটি পুরোনো। বাংলাদেশে থেকে ব্যাপক সংখ্যক যাত্রী না থাকায় বাংলাদেশি এয়ারলাইনগুলো ফিলিপাইনে ফ্লাইট পরিচালনা করে না। একই ভাবে ফিলিপাইনের কোনও এয়ারলাইন বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা করে না। বাংলাদেশে এয়ারলাইন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এয়ার সার্ভিস অ্যাগ্রিমেন্টে ফিফথ ফ্রিডম থাকলে ফিলিপাইনের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ এয়ারলাইনগুলোর জন্য লাভজনক হবে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত লিও টিটো এল অসান জুনিয়র ২৪ জানুয়ারি সচিবালয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ঢাকা-ম্যানিলা সরাসরি বিমান যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার বিষয়েও আগ্রহ  প্রকাশ করে রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সহায়তা চান। ফিলিপাইনের প্রস্তাবে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী।

মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনের মধ্যকার বিদ্যমান এয়ার সার্ভিস চুক্তিটি অনেক আগের হওয়ায় তা দ্রুত আপডেট করতে হবে। এরপর নতুন করে সই করার বিষয়ে তিনি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান দেন। ঢাকা-ম্যানিলা সরাসরি বিমান যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে যাত্রী ও কার্গোর বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্যও তিনি নির্দেশ প্রদান করবেন।

অপরদিকে গত ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রদূত লিও টিটো এল অসান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিমের সাসঙ্গে সাক্ষাৎ করে ফ্লাইট চালুর আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং ফিলিপাইন এয়ারলাইন্সের মধ্যে স্পেশাল প্রোরেট অ্যাগ্রিমেন্ট (এসপিএ) সম্পাদন করা, উভয় দেশের মধ্যকার এয়ার সার্ভিসেস অ্যাগ্রিমেন্ট সংশোধনের মাধ্যমে ব্যবসা উপযোগী করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

এ প্রসঙ্গে বিমানের বিপণন বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, একটি নতুন রুট চালু করতে গেলে বাণিজ্যিক বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হয়। বাংলাদেশ থেকে ফিলিপাইনে যাত্রী সংখ্যা কম। দুই দেশের মধ্যকার এয়ার সার্ভিসেস অ্যাগ্রিমেন্ট সংশোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পঞ্চম ফ্রিডম রাইটস পেলে বিমানের জন্য ফ্লাইট পরিচালনা লাভজনক হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *