দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সমঝোতার অংশ হিসেবে জাতীয় পার্টির (জাপা) জন্য ২৬টি আসন থেকে নিজেদের প্রার্থী প্রত্যাহার করেছিল আওয়ামী লীগ। এর ১৮টিতেই ক্ষমতাসীন দলের নেতারা স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। গতকাল রোববার ভোটের লড়াই শেষে সমঝোতা হওয়া আসনগুলোর মধ্যে ১১টিতে জয় পেয়েছেন বর্তমান সংসদের বিরোধী দলের প্রার্থীরা। সব মিলিয়ে দলটির প্রার্থীরা ১৮৮টি আসনে লড়লেও সমঝোতার বাইরে কোনো আসনে জয়ের দেখা পাননি কেউ।
জাপার জয়ী প্রার্থীরা হচ্ছেন রংপুর-৩ আসনে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের, পটুয়াখালী-১ আসনে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, বরিশাল-৩-এ গোলাম কিবরিয়া টিপু, সাতক্ষীরা-২-এ আশরাফুজ্জামান আশু, ফেনী-৩-এ মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, কিশোরগঞ্জ-৩-এ মুজিবুল হক চুন্নু, ঠাকুরগাঁও-৩-এ হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, কুড়িগ্রাম-১-এ একেএম মোস্তাফিজুর রহমান,
নারায়ণগঞ্জ-৫-এ একেএম সেলিম ওসমান, চট্টগ্রাম-৫-এ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও বগুড়া-২ আসনে শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ। এর বাইরে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করে নীলফামারী-৪-এ জয়ী হয়েছেন জাপার সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক। এ আসনে জাপা মনোনয়ন দিয়েছিল আহসান আদেলুরকে।
ঢাকা-১৮ আসনে লাঙ্গল প্রতীকে লড়েন জাপা চেয়ারম্যানের স্ত্রী শেরীফা কাদের। তবে সমঝোতায় পাওয়া রাজধানীর একমাত্র আসনটিতেও জয়ের দেখা পায়নি দলটি। কেটলি প্রতীক নিয়ে এ আসনে জিতেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক খসরু চৌধুরী। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতায় পাওয়া নীলফামারী-৩ আসনে রানা মোহাম্মদ সোহেল, নীলফামারী-৪ আসনে আহসান আদেলুর, হবিগঞ্জ-১ আসনে আব্দুল মুনিম চৌধুরী, কুড়িগ্রাম-২-এ পনির উদ্দিন আহমেদ, রংপুর-১-এ জি এম কাদেরের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার,
গাইবান্ধা-১-এ শামীম হায়দার পাটোয়ারী, গাইবান্ধা-২-এ আবদুর রশিদ সরকার, বগুড়া-৩-এ নুরুল ইসলাম তালুকদার, পিরোজপুর-৩-এ মাশরেকুল আজম, ময়মনসিংহ-৫-এ সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, ময়মনসিংহ-৮-এ ফখরুল ইমাম, চট্টগ্রাম-৮-এ সোলায়মান শেঠ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২-এ শাহজাহান ও মানিকগঞ্জ-১ আসনে জহিরুল আলম রুবেল লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
জাপার শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, দলের পক্ষ থেকে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়া হলেও যাচাই-বাছাই শেষে টেকেন ২৬৫ জন। গত শনিবার পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান ৭৭ জন। শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে ছিলেন ১৮৮ জন। এর মধ্যে সমঝোতার ২৬ আসনও রয়েছে। এবারের নির্বাচনে জাপার অনেক হেভিওয়েট নেতাও ধরাশায়ী হয়েছেন। জি এম কাদেরের অনুসারীদের মধ্যে অন্তত ১৫ জন হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন। রওশনপন্থি ৪ জন বিদ্রোহী প্রার্থীর কেউই বিজয়ী হতে পারেননি। ঢাকা-১ আসনে সালমা ইসলাম, ঢাকা-৫ আসনে টানা তিনবারের এমপি আবু হোসেন বাবলা পরাজিত হয়েছেন। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগের অন্যতম রাজনৈতিক মিত্র জাতীয় পার্টি। টানা তিন মেয়াদে জোটগত নির্বাচন করেছে দুটি দল।
একাদশ সংসদে জাপার এমপি আছেন ২৩ জন। চারজন সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যসহ ২৭ সদস্য নিয়ে বিরোধী দলের আসনে বসে জাপা। এবার ১১ আসন পাওয়ায় এককভাবে বিরোধী দল গঠন নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। দলগত দ্বন্দ্বের কারণে রওশন এরশাদ নির্বাচন বর্জন করেন।