৫১ বছর পর বিএনপির ঘাঁটিতে জয় পেলো নৌকা

বগুড়া প্রতিনিধি

ডা. মোস্তফা আলম নান্নু (ফাইল ছবি)

বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে দীর্ঘ ৫১ বছর পর জয়ের মুখ দেখলো নৌকা। জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা আলম নান্নু এ আসনে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার কাছে বর্তমান ও সাবেক দুজন সংসদ সদস্যসহ ১২ জন প্রার্থী শুধু ধরাশায়ী নন; জামানতও খুইয়েছেন।

নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বগুড়া-৭ আসনে সীমানা পরিবর্তন এবং শাজাহানপুর উপজেলা সংযুক্ত করা হয়। ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে আমানউল্লাহ খান নির্বাচিত হন। এরপর আসনটি হাতছাড়া হয়ে বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর দখলে চলে যায়।বগুড়ার গাবতলী উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি। তাই আসনটি বিএনপি অধ্যুষিত হয়ে পড়ে। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিএনপির হাবিবুর রহমান নির্বাচিত হন। সীমানা পরিবর্তন হওয়ার পর ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এটিএম আমিনুল ইসলাম সরকার পিন্টু সংসদ সদস্য হন।

১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচিত হন। তিনি আসনটি ছেড়ে দিলে ওই বছরের সেপ্টেম্বরের উপনির্বাচনে তার উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার সংসদ সদস্য হন। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি ও জুনের দুটি নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আসন ছেড়ে দেওয়ায় ১৯৯৬-এর উপনির্বাচনে হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু আবারো সংসদ সদস্য হন।

২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনে খালেদা জিয়া আবারও নির্বাচিত হন। তিনি ছেড়ে দিলে নভেম্বরের উপনির্বাচনে হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু এমপি হন। ২০০৮ সালে খালেদা জিয়া নির্বাচিত হওয়ার পর ছেড়ে দিলে ২০০৯ সালের উপনির্বাচনে ব্যারিস্টার মওদুদ আহম্মদ এমপি নির্বাচিত হন। এরপর বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে গেলে গত ২০১৪ সালের নির্বাচনে

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রেজাউল করিম বাবলু। বিএনপি ও জামায়াতের ভোটে বাবলুর কপাল খোলে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থী ডা. মোস্তফা আলম নান্নু ৯১ হাজার ২৯ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ফলে দীর্ঘ ৫১ বছর পর আসনটি পুনরুদ্ধার করে আওয়ামী লীগ। এবারের নির্বাচনে ডা. নান্নুর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী (লাঙ্গল) সাবেক এমপি এটিএম আমিনুল ইসলাম সরকার পিন্টু। তিনি পেয়েছেন ছয় হাজার ৮০১ ভোট। এ আসনে ১৩ প্রার্থীর মধ্যে ১২ জনই জামানত হারিয়েছেন।

বর্তমান সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক) রেজাউল করিম বাবলু গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এক লাখ ৯০ হাজার ২৯৯ ভোট পান। এবার দ্বাদশ নির্বাচনে মাত্র দুই হাজার সাত ভোট পাওয়ায় তার জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে।

এর আগে, গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু নির্বাচিত হন। ফলে এ আসনে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ৫০ বছরের বন্ধ্যাত্ব কাটে। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত আসনটিতে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এসএম সিরাজুল ইসলাম সুরুজ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের মিত্র জাতীয় পার্টির মুহম্মদ আলতাব আলী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *