ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলায় বাংলাদেশের সমর্থন

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলায় সমর্থন জানিয়েছে বাংলাদেশ

ইসরায়েলের হামলায় বহু ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন/ফাইল ছবি/রয়টার্স

গাজায় গণহত্যার অভিযোগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলায় সমর্থন জানিয়েছে বাংলাদেশ।

রবিবার (১৪ জানুয়ারি) দক্ষিণ আফ্রিকার আইনি পদক্ষেপে সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দেয় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

হলোকাস্টের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে জেনোসাইড কনভেনশন গৃহীত হয়। যে কনভেনশনে একটা জাতি, নৃতাত্ত্বিক গোত্র বা ধর্মীয় গোষ্ঠিকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে সংগঠিত কার্যক্রমকে “জেনোসাইড” বলে বর্ণনা করা হয়।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে বলেছে, “অধিকৃত গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের ব্যাপারে ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনের আওতায় বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘনের বিষয়ে আইসিজে-তে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার আইনি কার্যক্রম শুরুর আবেদনের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে বাংলাদেশ।”

বিবৃতিতে বলা হয়, “ফিলিস্তিনের মানুষের জন্য জন্য অস্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে দক্ষিণ আফ্রিকার অনুরোধকেও সমর্থন করে বাংলাদেশ। যার মধ্যে গাজার অভ্যন্তরে ও গাজার বিরুদ্ধে সমস্ত সামরিক অভিযান স্থগিত করা এবং গাজায় নিরাপদ, পর্যাপ্ত ও নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তার অনুমতি দেওয়ার অনুরোধও রয়েছে।”

আইসিজে-তে দক্ষিণ আফ্রিকা অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল গাজায় কনভেশনের শর্ত লঙ্ঘন করছে। সম্প্রতি মামলার শুনানিতে গাজায় ইসরায়েলের হামলা অবিলম্বে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আদালতকে আহ্বান জানায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

বাংলাদেশও দক্ষিণ আফ্রিকার এই আবেদনে সহমত জানিয়েছে। বাংলাদেশ বিবৃতিতে বলেছে, “গাজায় উদ্ভূত মানবিক বিপর্যয়ের অবসান ঘটাতে দৃঢ় পদক্ষেপ প্রয়োজন।”

গাজায় ইসরায়েলের হামলা অবিলম্বে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আদালতকে যে অনুরোধ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা তাতেও একমত বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর অব্যাহত হামলায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।”

বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ এই পরিকল্পিত আগ্রাসনকে গণহত্যা কনভেনশনসহ আন্তর্জাতিক আইনের জন্য স্পষ্ট অবজ্ঞা ও লঙ্ঘন বলে মনে করে

গণহত্যা কনভেনশনের রাষ্ট্রপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ গণহত্যার অপরাধ প্রতিরোধ ও শাস্তি বিধানের জন্য গণহত্যা কনভেনশনের অধীনে বাধ্যবাধকতাকে সম্মান করার জন্য সব রাষ্ট্রকে আহ্বান জানাচ্ছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং গাজায় দ্রুত, নিরাপদ ও বাধাবিহীনভাবে জীবন রক্ষাকারী সহায়তা পাঠানোর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছে।”

এতে আরও বলা হয়, “বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইলের দখলদারিত্বের অবসান এবং একটি টেকসই ও স্থায়ী সমাধানের জন্য তার আগের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছে। যাতে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমানা অনুযায়ী একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।”

নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আইসিজে-তে গত ডিসেম্বরের শেষদিকে মামলা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। আদালত এ মাসের শেষের দিকে সম্ভাব্য জরুরি পদক্ষেপের বিষয়ে রায় দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে গণহত্যার অভিযোগের বিষয়ে রায় হতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *