আইএমএফ
ঢাকা: বাংলাদেশের জন্য ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার অনুমোদনের পাশাপাশি সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরিচালকরা।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ে বোর্ড সভায় এ প্রশংসা করা হয়।
সভায় বেশ কিছু পরামর্শও দেয় আইএমএফ।
আন্তর্জাতিক সংস্থাটি মনে করছে, কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও আইএমএফের শর্ত পরিপালনে বাংলাদেশ সামগ্রিকভাবে পথচ্যুত হয়নি।
এছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশ যেসব সংশোধনমূলক ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে ও জরুরি সংস্কার বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছে, তাকে স্বাগত জানিয়েছে আইএমএফ।
বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি, পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে।এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বহুমুখী বাহ্যিক আঘাত মোকাবিলা করতে হয়েছে। আইএমএফের পরিচালকেরা মনে করেন, স্বল্পমেয়াদি নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে লক্ষ্য হওয়া উচিত মূল্যস্ফীতির রাশ টানা এবং বহিস্থ ধাক্কা মোকাবিলায় সক্ষমতা বৃদ্ধি।
সেটা করার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষের ওপর যেন তার প্রভাব না পড়ে। শক্তিশালী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতে কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার গুরুত্বও সভায় উঠে আসে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের উচ্চ ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। এই পরিস্থিতিতে আইএমএফ মনে করে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রোধে সরকারি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা উন্নত করা প্রয়োজন; সেই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করার তাগিদ দিয়েছে তারা। সংস্থাটি মনে করছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা ব্যবস্থা উন্নত হলে তা আর্থিক খাতের আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বেসরকারি খাতের তহবিলও পাওয়া যাবে।
আইএমএফ মনে করে, দেশের অর্থনীতিতে নানাবিধ সংস্কার প্রয়োজন। উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ হতে হলে প্রত্যক্ষ বিদেশি
বিনিয়োগ (এফডিআই) বৃদ্ধি, রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ ও সামগ্রিকভাবে প্রবৃদ্ধির গতি বাড়াতে শ্রমশক্তিতে বাণিজ্য উদারীকরণ, বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়ন, শ্রমশক্তির দক্ষতা উন্নয়ন ও নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি জরুরি।
উন্নয়নের জন্য দেশে অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। এ বাস্তবতায় আইএমএফ মনে করে, আর্থিক খাতের সংস্কার জরুরি। ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি কমাতে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমানোর পাশাপাশি পুঁজি পুনরুদ্ধারে বিশেষ কৌশল প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছে আইএমএফ। সংস্থার পরিচালকেরা এ বিষয়ে একমত যে, ব্যাংক খাতের তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো জোরদার করা, শাসনব্যবস্থার উন্নতি ও দেশীয় পুঁজিবাজারের উন্নয়ন করা গেলে আর্থিক খাতের দক্ষতা বাড়বে এবং উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
২০২২ সালের জুলাইয়ে আইএমএফের কাছে ঋণের আবেদন করে বাংলাদেশ। এরপর গত ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলার ঋণঋণ দেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। বলা হয়, ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে দেবে এ অর্থ। আইএমএফ পর্ষদ ২ ফেব্রুয়ারি ঋণের প্রথম কিস্তির অর্থ ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার অনুমোদন করে। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার ছাড়ের অনুমোদন দেয় সংস্থার বোর্ড।