চট্টগ্রাম বন্দরে প্রথমবারের মতো বিদেশি তত্ত্বাবধানে চালু হচ্ছে নতুন টার্মিনাল

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (ছবি: বাংলা ট্রিবিউন)

https://0bfd7800ba1a3ee68b256f177dd53101.safeframe.googlesyndication.com/safeframe/1-0-40/html/container.html

চট্টগ্রাম বন্দরে প্রথমবারের মতো বিদেশি তত্ত্বাবধানে চালু হচ্ছে নতুন টার্মিনাল

নাসির উদ্দিন রকি, চট্টগ্রাম

২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:০০

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (ছবি: বাংলা ট্রিবিউন)

চট্টগ্রাম বন্দরে নির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের (পিসিটি) কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আগামী ৬ এপ্রিল থেকে। এ কনটেইনার টার্মিনালটি পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে সৌদি আরব-ভিত্তিক বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটি)। গত বছরের ৬ ডিসেম্বর বিদেশি এ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ)। চুক্তির দিন থেকে ২২ বছর চট্টগ্রাম বন্দরের এ কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনা করবে প্রতিষ্ঠানটি। প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেলো বিদেশিরা।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী রাফিউল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগামী ৬ এপ্রিল থেকে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল অপারেশন কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রথম দুই বছর যে সব জাহাজে নিজস্ব ক্রেন আছে, সেগুলো ভিড়বে। এরমধ্যে যন্ত্রপাতি বসানোর কাজ শুরু হবে। এখানে গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ আধুনিক সব যন্ত্রপাতি নিজস্ব অর্থায়নে সংযোজন করবে বিদেশি প্রতিষ্ঠানটি। এরপর গিয়ার লেসসহ (ক্রেন বিহীন) যে কোনও জাহাজ এ টার্মিনালে ভিড়তে পারবে।’এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল প্রস্তুত। গত ৬ ডিসেম্বর সৌদি আরবভিত্তিক বন্দর পরিচালনাকারী রেড সি গেটওয়ে নামের প্রতিষ্ঠানকে পিসিটি পরিচালনার দায়িত্ব হস্তান্তর চুক্তি স্বাক্ষর হয়। প্রতিষ্ঠানটি এখানে যন্ত্রপাতি ক্রয়, জনবলসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ শুরু করেছে। আগামী এপ্রিল থেকে এ কনটেইনার টার্মিনালের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। প্রথমত ক্রেনবাহী জাহাজগুলো এখানে ভিড়বে। তবে পুরোদমে চালু করতে আরও সময় লাগবে। জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর গ্যান্ট্রি ক্রেন নির্মাণসহ অন্যান্য সরঞ্জাম নির্মাণ ও সংযোজনে সময় লাগবে।’

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে ১ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পিসিটি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। নতুন নির্মিত এই টার্মিনালে একসঙ্গে তিনটি কনটেইনার জাহাজ ভিড়তে পারবে। পতেঙ্গা এলাকায় নির্মিত এ টার্মিনালের মাধ্যমে বছরে ৫ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং সম্ভব হবে। পাশাপাশি এ টার্মিনালটি বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের বাকি টার্মিনাল থেকে এখানে বেশি ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যাবে। যেখানে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ৯ মিটার ড্রাফট ও ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের কনটেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারে। সেখানে পিসিটি’তে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ১০ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে।

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি পিসিটি চট্টগ্রাম বন্দরে বাকি টার্মিনাল থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার কাছে। যে কারণে আসা-যাওয়া মিলে ১৪ কিলোমিটার দূরত্ব কমবে পিসিটি ব্যবহারকারীদের। এতে সাশ্রয় হবে জ্বালানি ও সময়। সে সঙ্গে

তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে চারটি কনটেইনার টার্মিনাল আছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ড্রাফটের (গভীরতা) জাহাজ ভেড়ানো যায় নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে (এনসিটি)। এখানে সর্বোচ্চ ৯ মিটার থেকে সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যায়। সর্বশেষ নির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে (পিসিটি) ভেড়ানো যাবে সাড়ে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ। যে কারণে বেশি মালামাল নিয়ে জাহাজ এখানে ভিড়তে পারবে। বেশি কনটেইনার নিয়ে বড় জাহাজ ভেড়ার সুযোগ থাকায় খরচ কমবে পণ্য আমদানি-রফতানিতে।’

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে প্রকল্প এলাকায় সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা স্থানান্তরসহ নানা জটিলতার কারণে নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। এ কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০২২ সালের জুন মাসে। বন্দরের ড্রাইডক থেকে বোট ক্লাব পর্যন্ত ২৬ একর জমিতে ১ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। নিজস্ব তহবিল থেকে প্রকল্পের অর্থায়ন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের তত্ত্বাবধান করে সেনাবাহিনীর ৩৪-ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। গত বছরের ১৪ নভেম্বর ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পতেঙ্গা কনটেইনার টামিনালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

নতুন নির্মিত এ টার্মিনালে ৫৮৪ মিটার লম্বা জেটিতে একসঙ্গে ৩টি কনটেইনার জাহাজ ভেড়ানো যাবে। ২২০ মিটার দীর্ঘ ডলফিন (তেল খালাসের) জেটি, ৮৯ হাজার বর্গমিটার আরসিসি ইয়ার্ড, ২ হাজার ১২৮ বর্গমিটার কনটেইনার শুল্ক স্টেশন, ২ হাজার ১৫০ মিটার লম্বা ৬ মিটার উচ্চ কাস্টম বন্ডেড হাউজ, ২ হাজার ৫০০ মিটার রেলওয়ে ট্রাক, ৪২০ মিটার ফ্লাইওভার, ১ হাজার ২০০ বর্গমিটার মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপ এবং ৫ হাজার ৫৮০ বর্গকিলোমিটার অফিস ভবন। এ টার্মিনালের মাধ্যমে বছরে জাহাজ থেকে ৫ লাখ আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনার ওঠানো-নামানো সম্ভব হবে। এ ছাড়া ২০৪ মিটার লম্বা ডলফিন জেটিতে তেল পরিবহনকারী একটি জাহাজ ভেড়ানো যাবে। এ টার্মিনালের মাধ্যমে বছরে ৫ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং সম্ভব হবে।

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে সাড়ে ১০ মিটার ড্রাফটের (গভীরতা) জাহাজ ভেড়ানো যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে চারটি কনটেইনার টার্মিনাল আছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ড্রাফটের (গভীরতা) জাহাজ ভেড়ানো যায় নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে (এনসিটি)। এখানে সর্বোচ্চ ৯ মিটার থেকে সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যায়। সর্বশেষ নির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে (পিসিটি) ভেড়ানো যাবে সাড়ে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ। যে কারণে বেশি মালামাল নিয়ে জাহাজ এখানে ভিড়তে পারবে। বেশি কনটেইনার নিয়ে বড় জাহাজ ভেড়ার সুযোগ থাকায় খরচ কমবে পণ্য আমদানি-রফতানিতে।’

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে প্রকল্প এলাকায় সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা স্থানান্তরসহ নানা জটিলতার কারণে নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। এ কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০২২ সালের জুন মাসে। বন্দরের ড্রাইডক থেকে বোট ক্লাব পর্যন্ত ২৬ একর জমিতে ১ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। নিজস্ব তহবিল থেকে প্রকল্পের অর্থায়ন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের তত্ত্বাবধান করে সেনাবাহিনীর ৩৪-ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। গত বছরের ১৪ নভেম্বর ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পতেঙ্গা কনটেইনার টামিনালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

নতুন নির্মিত এ টার্মিনালে ৫৮৪ মিটার লম্বা জেটিতে একসঙ্গে ৩টি কনটেইনার জাহাজ ভেড়ানো যাবে। ২২০ মিটার দীর্ঘ ডলফিন (তেল খালাসের) জেটি, ৮৯ হাজার বর্গমিটার আরসিসি ইয়ার্ড, ২ হাজার ১২৮ বর্গমিটার কনটেইনার শুল্ক স্টেশন, ২ হাজার ১৫০ মিটার লম্বা ৬ মিটার উচ্চ কাস্টম বন্ডেড হাউজ, ২ হাজার ৫০০ মিটার রেলওয়ে ট্রাক, ৪২০ মিটার ফ্লাইওভার, ১ হাজার ২০০ বর্গমিটার মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপ এবং ৫ হাজার ৫৮০ বর্গকিলোমিটার অফিস ভবন। এ টার্মিনালের মাধ্যমে বছরে জাহাজ থেকে ৫ লাখ আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনার ওঠানো-নামানো সম্ভব হবে। এ ছাড়া ২০৪ মিটার লম্বা ডলফিন জেটিতে তেল পরিবহনকারী একটি জাহাজ ভেড়ানো যাবে। এ টার্মিনালের মাধ্যমে বছরে ৫ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং সম্ভব হবে।

দেশের ৯৪ ভাগ আমদানি-রফতানি হয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। আবার মূল রফতানি বাণিজ্যের ৯৮ ভাগ হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য যে হারে বাড়ছে, তাতে বন্দরে আরও নতুন টার্মিনাল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনেক আগেই দেখা দিয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বশেষ কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হয় ২০০৭ সালে। যার নাম নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় পর পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল বাস্তবায়ন করা হয়। এটির ব্যবহার শুরু হলে বন্দরের টার্মিনালের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে চারটি। অফরদিকে জাহাজ ভেড়ানোর জন্য বন্দরের মূল জেটির সংখ্যা দাঁড়াবে ২১টিতে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি (পিপিপি) টার্মিনাল পরিচালনার বিদেশি অপারেটর নিয়োগে কাজ করছে। সৌদি আরব, দুবাই, ভারত ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পিসিটি পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করে প্রস্তাবনা দেয়। এরমধ্যে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে, দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড, ভারতের আমদানি পোর্ট অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড ও সিঙ্গাপুরের পিএস সিঙ্গাপুর প্রস্তাবনা জমা দেয়। এসব প্রস্তাবনা যাচাই-বাছাই শেষে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালকে অপারেটর হিসেবে নিয়োগে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জানা গেছে, রেড সি গেটওয়ে সৌদি আরবের জেদ্দা ইসলামিক পোর্টের বৃহত্তম টার্মিনাল অপারেটর। প্রতিষ্ঠানটি টার্মিনাল পরিচালনার পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বন্দর সম্প্রসারণ ও নির্মাণ করে থাকে। জেদ্দা পোর্ট বিশ্বের ১০০ শীর্ষ বন্দরের তালিকায় ৪১তম। চট্টগ্রাম বন্দর ৬৬তম।

রেড সি গেটওয়ে প্রস্তাবে বলেছে, পিসিটি পরিচালনায় ২৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশি টাকায় দুই হাজার ৬৪০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১১০ টাকা হিসেবে)। নিজেদের অর্থে যন্ত্রপাতি কিনে ২২ বছরের জন্য এই টার্মিনাল পরিচালনার চুক্তি করে প্রতিষ্ঠানটি। আর চুক্তির দিন থেকে গণনা শুরু হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *