বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন আর ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ নিয়ে
বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন আর ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ নিয়ে গাঢ় সবুজের উপকূলীয় বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসনে নির্বাচনী হাওয়া বইছে। বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি অনিশ্চিত থাকলেও আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, জাকের পার্টিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করায় উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী। এসব দল ও প্রার্থীর নেতাকর্মী, সমর্থকেরা আনন্দ-উল্লাস, শোভাযাত্রা ও মিষ্টি বিতরণ করছেন। চায়ের দোকান থেকে পাড়া-মহল্লা মুখর হয়ে উঠেছে নানা রাজনৈতিক আলোচনা- সমালোচনায়। সবমিলিয়ে বাগেরহাটে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জমজমাট পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে নৌকার নতুন কাণ্ডারি হয়ে এসেছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ। বাকি তিনটি আসনেই বর্তমান সংসদ সদস্যরাই নৌকার হাল ধরে আছেন। তারা হলেন বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র বাগেরহাট-১ (ফকিরহাট-মোল্লাহাট-চিতলমারী) আসনে শেখ হেলাল উদ্দিন, বাগেরহাট-২ (সদর ও কচুয়া) আসনে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র শেখ তন্ময়, বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা) আসনে হাবিবুন নাহার। বাগেরহাট ১ ও ২ আসনে নৌকার একক প্রার্থী থাকলেও বাগেরহাট ৩ ও ৪ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ২৪ জন। এরমধ্যে বাগেরহাট-৩ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন ১১ জন। আর বাগেরহাট-৪ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ১৩ জন।
দলীয় নেতারা চাইলে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন- এমন ঘোষণার পর এ দুই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত একাধিক ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী থাকতে পারেন বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে। এটি নির্বাচনী হাওয়ায় যেমন নতুন মাত্রা যোগ করছে, তেমনি সমীকরণ ওলট-পালট হয়ে যেতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তাদের মতে, বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। একইসঙ্গে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে এবং উৎসবমুখর পরিবেশ হবে। কিন্তু ‘সোনার হরিণ নৌকার মনোনয়ন’ পাওয়া প্রার্থীদের কেউ কেউ বিপাকে পড়তে পারেন।
ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বাগেরহাট-৩ আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন চিত্রনায়ক শাকিল আহসান (শাকিল খান)। গত ২৭ নভেম্বর জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে শাকিল খানের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তার ভাগ্নে শাহরিয়ার নাজিম।
বাগেরহাট-৪ আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জামিল হোসাইন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তার সঙ্গেও আওয়ামী লীগের একটি অংশ সক্রিয় রয়েছে। বাগেরহাট-২ থেকে এসএম আজমল হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
চারটি আসনে জাপার চূড়ান্ত প্রার্থীরা হলেন বাগেরহাট-১ আসনে মো. কামরুজ্জামান, বাগেরহাট-২ আসনে হাজরা শহীদুল ইসলাম, বাগেরহাট-৩ আসনে মো. মনিরুজ্জামান মনি এবং বাগেরহাট-৪ আসনে সাজন কুমার মিস্ত্রী। তারা মনোনয়ন পেয়ে লাঙ্গল মার্কা নিয়ে জোর লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছেন। এ ছাড়া বাগেরহাট-২ আসনে তৃণমূল বিএনপির মরিয়ম সুলতানা এবং বাগেরহাট-৩ আসনে ম্যানুয়েল সরকার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
আর গোলাপ ফুল মার্কা নিয়ে বাগেরহাট-১ আসন থেকে শেখ গোলাম ফারুক (চাঁন), বাগেরহাট-২ আসনে খান আরিফুর রহমান জাকের পার্টির মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। অপর দুটি আসনে তৃণমূল বিএনপি ও জাকের পার্টির প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন বলে সূত্রে জানা গেছে।
বাগেরহাট-১ ॥ এই আসনে সবসময়ই নির্ভার আওয়ামী লীগ। মধুমতি-চিত্রা-পশুর-কুমারখালী-কালিগঙ্গা-ভোলা আর ভৈরব বিধৌত এই আসনটি বঙ্গবন্ধুর নৌকার দুর্জয় ঘাঁটি। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ কোনো নির্বাচনে এই আসনে নৌকা হারেনি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখান থেকে একাধিকবার বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এরপর বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ হেলাল উদ্দিন এ আসনের সংসদ সদস্য হন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি নৌকার অপ্রতিদ্বন্দ্বী কা-ারি হয়েছেন।
এ আসনের ফকিরহাট ও মোল্লাহাট উপজেলায় বিএনপি-জামায়াতের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ১৯৯১ সালে এই আসন থেকে তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা এই আসন থেকে নির্বাচিত হন। বর্তমান সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে উপনির্বাচনে এবং ২০০১, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মুজিবর রহমান, একদার তুখোড় ছাত্রনেতা ওয়াহিদুজ্জামান দীপু, কেন্দ্রীয় নেতা সুবক্তা রবিউল আলম, বিএনপি নেতা সাবেক প্রধান প্রকৌশলী (নৌ) শেখ মো. মাসুদ রানা প্রার্থী হতে পারেন। এবার এ আসন থেকে ইতোমধ্যে জাপা, জাকের পার্টি, তৃণমূল বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মাঠে রয়েছেন।
এদিকে নির্বাচন ঘিরে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করলেও চূড়ান্ত প্রার্থিতার বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানায়নি। প্রতিটি আসনে প্রাথমিকভাবে তাদের প্রার্থী নির্বাচন করে রেখেছে বলে জানিয়েছেন জেলা সভাপতি মাওলানা মো. মাহমুদুল হাসান। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) একক প্রার্থী হতে পারেন দলটির চিতলমারী উপজেলা সভাপতি খান সেকেন্দার আলী। ত্যাগী নেতা হিসেবে তার যথেষ্ট কর্মী-সমর্থক রয়েছে।
বাগেরহাট-২ ॥ জনশ্রুতি আছে, এ আসন থেকে জয়ী প্রার্থীর দল সরকার গঠন করে। বিগত দিনে হয়েছেও তাই। ফলে বড় দলগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে ভোটের হিসাব-নিকাশ চলে বছরজুড়েই। কারণ এখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বর্তমানে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির পাল্লা প্রায় সমান। আগামী নির্বাচনে এ আসনে আবার নৌকার মাঝি হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র শেখ তন্ময়।
এই আসনে বিএনপির শক্ত অবস্থান থাকলেও দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দীর্ঘদিনের। জেলা পর্যায়ের সভা-সমাবেশে প্রকাশ্যে নিজেদের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীসহ যে কোনো কর্মসূচিও পৃথকভাবে পালন করতে দেখা গেছে দুটি গ্রুপকে। যা নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ আছে। এ আসনে দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীও একাধিক।
বিএনপির ত্যাগী নেতারা বলছেন, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভার সদস্য এবং দলের প্রভাবশালী নেতা মোস্তাফিজুর রহমানের মৃত্যুর পর বাগেরহাটে বিএনপি অনেকটা ঝিমিয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে দলের মধ্যে টানাপোড়েন চলতে থাকে। পরে শিল্পপতি এমএএইচ সেলিম দলের হাল ধরেন এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে তখন ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করায় অনেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন, যার প্রভাব বিদ্যমান।
বাগেরহাট-৩ ॥ অর্থনৈতিক কর্মকা-ে ‘সুবর্ণভূমি’ হবার কারণে বাগেরহাট-৩ আসনটি রাজনীতিতেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু বাগেরহাট ও বাংলাদেশ নয়, বৈদেশিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মোংলা বন্দরের গুরুত্ব আজ বহুগুণ বেড়েছে। মোংলার লাগোয়া উপজেলা রামপাল। মোংলা বন্দর, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, খুলনা-মোংলা রেলপথ ও পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে এই দুই উপজেলায় গত দেড় দশকে অভূতপূর্ব শিল্পায়ন হয়েছে। মাত্র দেড় দশকের ব্যবধানে এখানে জমির মূল্য বহুগুণ বেড়েছে। এলাকায় হাজার হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। বেশিরভাগ সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এই আসন থেকে জয়ী হয়েছেন
বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মুজিবর রহমান, একদার তুখোড় ছাত্রনেতা ওয়াহিদুজ্জামান দীপু, কেন্দ্রীয় নেতা সুবক্তা রবিউল আলম, বিএনপি নেতা সাবেক প্রধান প্রকৌশলী (নৌ) শেখ মো. মাসুদ রানা প্রার্থী হতে পারেন। এবার এ আসন থেকে ইতোমধ্যে জাপা, জাকের পার্টি, তৃণমূল বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মাঠে রয়েছেন।
এদিকে নির্বাচন ঘিরে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করলেও চূড়ান্ত প্রার্থিতার বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানায়নি। প্রতিটি আসনে প্রাথমিকভাবে তাদের প্রার্থী নির্বাচন করে রেখেছে বলে জানিয়েছেন জেলা সভাপতি মাওলানা মো. মাহমুদুল হাসান। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) একক প্রার্থী হতে পারেন দলটির চিতলমারী উপজেলা সভাপতি খান সেকেন্দার আলী। ত্যাগী নেতা হিসেবে তার যথেষ্ট কর্মী-সমর্থক রয়েছে।
বাগেরহাট-২ ॥ জনশ্রুতি আছে, এ আসন থেকে জয়ী প্রার্থীর দল সরকার গঠন করে। বিগত দিনে হয়েছেও তাই। ফলে বড় দলগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে ভোটের হিসাব-নিকাশ চলে বছরজুড়েই। কারণ এখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বর্তমানে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির পাল্লা প্রায় সমান। আগামী নির্বাচনে এ আসনে আবার নৌকার মাঝি হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র শেখ তন্ময়।
এই আসনে বিএনপির শক্ত অবস্থান থাকলেও দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দীর্ঘদিনের। জেলা পর্যায়ের সভা-সমাবেশে প্রকাশ্যে নিজেদের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীসহ যে কোনো কর্মসূচিও পৃথকভাবে পালন করতে দেখা গেছে দুটি গ্রুপকে। যা নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ আছে। এ আসনে দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীও একাধিক।
বিএনপির ত্যাগী নেতারা বলছেন, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভার সদস্য এবং দলের প্রভাবশালী নেতা মোস্তাফিজুর রহমানের মৃত্যুর পর বাগেরহাটে বিএনপি অনেকটা ঝিমিয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে দলের মধ্যে টানাপোড়েন চলতে থাকে। পরে শিল্পপতি এমএএইচ সেলিম দলের হাল ধরেন এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে তখন ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করায় অনেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন, যার প্রভাব বিদ্যমান।
বাগেরহাট-৩ ॥ অর্থনৈতিক কর্মকা-ে ‘সুবর্ণভূমি’ হবার কারণে বাগেরহাট-৩ আসনটি রাজনীতিতেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু বাগেরহাট ও বাংলাদেশ নয়, বৈদেশিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মোংলা বন্দরের গুরুত্ব আজ বহুগুণ বেড়েছে। মোংলার লাগোয়া উপজেলা রামপাল। মোংলা বন্দর, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, খুলনা-মোংলা রেলপথ ও পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে এই দুই উপজেলায় গত দেড় দশকে অভূতপূর্ব শিল্পায়ন হয়েছে। মাত্র দেড় দশকের ব্যবধানে এখানে জমির মূল্য বহুগুণ বেড়েছে। এলাকায় হাজার হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। বেশিরভাগ সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এই আসন থেকে জয়
বাংলাদেশ
বাগেরহাট জেলা
চায়ের দোকান থেকে পাড়া-মহল্লা মুখর নির্বাচনের ড বাগেরহাট প্রতিনিধি
বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন আর ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ নিয়ে
বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন আর ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ নিয়ে গাঢ় সবুজের উপকূলীয় বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসনে নির্বাচনী হাওয়া বইছে। বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি অনিশ্চিত থাকলেও আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, জাকের পার্টিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করায় উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী। এসব দল ও প্রার্থীর নেতাকর্মী, সমর্থকেরা আনন্দ-উল্লাস, শোভাযাত্রা ও মিষ্টি বিতরণ করছেন। চায়ের দোকান থেকে পাড়া-মহল্লা মুখর হয়ে উঠেছে নানা রাজনৈতিক আলোচনা- সমালোচনায়। সবমিলিয়ে বাগেরহাটে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জমজমাট পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে নৌকার নতুন কাণ্ডারি হয়ে এসেছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ। বাকি তিনটি আসনেই বর্তমান সংসদ সদস্যরাই নৌকার হাল ধরে আছেন। তারা হলেন বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র বাগেরহাট-১ (ফকিরহাট-মোল্লাহাট-চিতলমারী) আসনে শেখ হেলাল উদ্দিন, বাগেরহাট-২ (সদর ও কচুয়া) আসনে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র শেখ তন্ময়, বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা) আসনে হাবিবুন নাহার। বাগেরহাট ১ ও ২ আসনে নৌকার একক প্রার্থী থাকলেও বাগেরহাট ৩ ও ৪ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ২৪ জন। এরমধ্যে বাগেরহাট-৩ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন ১১ জন। আর বাগেরহাট-৪ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ১৩ জন।
দলীয় নেতারা চাইলে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন- এমন ঘোষণার পর এ দুই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত একাধিক ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী থাকতে পারেন বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে। এটি নির্বাচনী হাওয়ায় যেমন নতুন মাত্রা যোগ করছে, তেমনি সমীকরণ ওলট-পালট হয়ে যেতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তাদের মতে, বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। একইসঙ্গে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে এবং উৎসবমুখর পরিবেশ হবে। কিন্তু ‘সোনার হরিণ নৌকার মনোনয়ন’ পাওয়া প্রার্থীদের কেউ কেউ বিপাকে পড়তে পারেন।
ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বাগেরহাট-৩ আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন চিত্রনায়ক শাকিল আহসান (শাকিল খান)। গত ২৭ নভেম্বর জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে শাকিল খানের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তার ভাগ্নে শাহরিয়ার নাজিম।
বাগেরহাট-৪ আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জামিল হোসাইন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তার সঙ্গেও আওয়ামী লীগের একটি অংশ সক্রিয় রয়েছে। বাগেরহাট-২ থেকে এসএম আজমল হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
চারটি আসনে জাপার চূড়ান্ত প্রার্থীরা হলেন বাগেরহাট-১ আসনে মো. কামরুজ্জামান, বাগেরহাট-২ আসনে হাজরা শহীদুল ইসলাম, বাগেরহাট-৩ আসনে মো. মনিরুজ্জামান মনি এবং বাগেরহাট-৪ আসনে সাজন কুমার মিস্ত্রী। তারা মনোনয়ন পেয়ে লাঙ্গল মার্কা নিয়ে জোর লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছেন। এ ছাড়া বাগেরহাট-২ আসনে তৃণমূল বিএনপির মরিয়ম সুলতানা এবং বাগেরহাট-৩ আসনে ম্যানুয়েল সরকার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
আর গোলাপ ফুল মার্কা নিয়ে বাগেরহাট-১ আসন থেকে শেখ গোলাম ফারুক (চাঁন), বাগেরহাট-২ আসনে খান আরিফুর রহমান জাকের পার্টির মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। অপর দুটি আসনে তৃণমূল বিএনপি ও জাকের পার্টির প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন বলে সূত্রে জানা গেছে।
বাগেরহাট-১ ॥ এই আসনে সবসময়ই নির্ভার আওয়ামী লীগ। মধুমতি-চিত্রা-পশুর-কুমারখালী-কালিগঙ্গা-ভোলা আর ভৈরব বিধৌত এই আসনটি বঙ্গবন্ধুর নৌকার দুর্জয় ঘাঁটি। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ কোনো নির্বাচনে এই আসনে নৌকা হারেনি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখান থেকে একাধিকবার বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এরপর বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ হেলাল উদ্দিন এ আসনের সংসদ সদস্য হন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি নৌকার অপ্রতিদ্বন্দ্বী কা-ারি হয়েছেন।
এ আসনের ফকিরহাট ও মোল্লাহাট উপজেলায় বিএনপি-জামায়াতের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ১৯৯১ সালে এই আসন থেকে তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা এই আসন থেকে নির্বাচিত হন। বর্তমান সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে উপনির্বাচনে এবং ২০০১, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মুজিবর রহমান, একদার তুখোড় ছাত্রনেতা ওয়াহিদুজ্জামান দীপু, কেন্দ্রীয় নেতা সুবক্তা রবিউল আলম, বিএনপি নেতা সাবেক প্রধান প্রকৌশলী (নৌ) শেখ মো. মাসুদ রানা প্রার্থী হতে পারেন। এবার এ আসন থেকে ইতোমধ্যে জাপা, জাকের পার্টি, তৃণমূল বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মাঠে রয়েছেন।
এদিকে নির্বাচন ঘিরে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করলেও চূড়ান্ত প্রার্থিতার বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানায়নি। প্রতিটি আসনে প্রাথমিকভাবে তাদের প্রার্থী নির্বাচন করে রেখেছে বলে জানিয়েছেন জেলা সভাপতি মাওলানা মো. মাহমুদুল হাসান। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) একক প্রার্থী হতে পারেন দলটির চিতলমারী উপজেলা সভাপতি খান সেকেন্দার আলী। ত্যাগী নেতা হিসেবে তার যথেষ্ট কর্মী-সমর্থক রয়েছে।
বাগেরহাট-২ ॥ জনশ্রুতি আছে, এ আসন থেকে জয়ী প্রার্থীর দল সরকার গঠন করে। বিগত দিনে হয়েছেও তাই। ফলে বড় দলগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে ভোটের হিসাব-নিকাশ চলে বছরজুড়েই। কারণ এখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বর্তমানে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির পাল্লা প্রায় সমান। আগামী নির্বাচনে এ আসনে আবার নৌকার মাঝি হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র শেখ তন্ময়।
এই আসনে বিএনপির শক্ত অবস্থান থাকলেও দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দীর্ঘদিনের। জেলা পর্যায়ের সভা-সমাবেশে প্রকাশ্যে নিজেদের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীসহ যে কোনো কর্মসূচিও পৃথকভাবে পালন করতে দেখা গেছে দুটি গ্রুপকে। যা নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ আছে। এ আসনে দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীও একাধিক।
বিএনপির ত্যাগী নেতারা বলছেন, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভার সদস্য এবং দলের প্রভাবশালী নেতা মোস্তাফিজুর রহমানের মৃত্যুর পর বাগেরহাটে বিএনপি অনেকটা ঝিমিয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে দলের মধ্যে টানাপোড়েন চলতে থাকে। পরে শিল্পপতি এমএএইচ সেলিম দলের হাল ধরেন এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে তখন ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করায় অনেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন, যার প্রভাব বিদ্যমান।
বাগেরহাট-৩ ॥ অর্থনৈতিক কর্মকা-ে ‘সুবর্ণভূমি’ হবার কারণে বাগেরহাট-৩ আসনটি রাজনীতিতেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু বাগেরহাট ও বাংলাদেশ নয়, বৈদেশিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মোংলা বন্দরের গুরুত্ব আজ বহুগুণ বেড়েছে। মোংলার লাগোয়া উপজেলা রামপাল। মোংলা বন্দর, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, খুলনা-মোংলা রেলপথ ও পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে এই দুই উপজেলায় গত দেড় দশকে অভূতপূর্ব শিল্পায়ন হয়েছে। মাত্র দেড় দশকের ব্যবধানে এখানে জমির মূল্য বহুগুণ বেড়েছে। এলাকায় হাজার হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। বেশিরভাগ সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এই আসন থেকে জয়ী হয়েছেন।
এ আসনে গত কয়েক বছর ধরে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্ট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রবীণ এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, বিএনপি-জামায়াত ও জাপা আমলে চিংড়ি ঘের সন্ত্রাসের কারণে এ অঞ্চলের মানুষ চরম অশান্তিতে ছিল। যা ‘আধুনিক রামপাল-মোংলার জনক’ তালুকদার আব্দুল খালেকের আমলে দমন হয়। উন্নয়নের চাকা ঘুরতে শুরু করে। তার সহধর্মিণী বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবুন নাহার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও নৌকার কা-ারি হয়েছেন।
১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯১ সালে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এএসএম মোস্তাফিজুর রহমানকে হারিয়ে তালুকদার আব্দুল খালেক জয়ী হন। এরপর ২০১৮ সালের প্রথমদিকে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য আবারও জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন তালুকদার আব্দুল খালেক।