ছাগল চোরদের চিনে ফেলায় গ্রাম পুলিশ রনজিৎকে হত্যা

রাজবাড়ী: রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র পাহারার দায়িত্বে থাকা গ্রাম পুলিশ রনজিৎ কুমার দে (৪৫) হত্যা মামলার মূল আসামি মুক্তার শেখকে (২৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ছাগল চোরদের চিনে ফেলায় রনজিৎকে শ্বাসরোধে হত্যা করে মুক্তার ও তার দুই সহযোগী।

শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় রাজবাড়ীর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ।

গ্রেপ্তার মুক্তার ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার ঝাউকাঠি গ্রামের আজিদ শেখের ছেলে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, রনজিৎ কুমার দে বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়ন পরিষদে মহল্লাদার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তিনি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র চর আড়কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাহারা দেওয়ার জন্য যান।এদিন তার সঙ্গে বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী মো. ইউসুফ ছিলেন। রাত সাড়ে ৩টার দিকে রনজিৎ প্রকৃতির ডাকে স্কুলের পেছনের বাগানে যান।

আধা ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও ফিরে না আসায় নৈশপ্রহরী ইউসুফ রনজিৎকে ডাকাডাকি করতে থাকেন। রনজিৎ সাড়া না দেওয়ায় ইউসুফ বিষয়টি স্কুলের শিক্ষক ও স্থানীয় কিরম মেম্বারকে ফোনে জানান। পরে ভোর আনুমানিক ৫টার দিকে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বিদ্যালয়ের টয়লেটের পাশে বাগানে গ্রাম পুলিশ রনজিৎ এর মরদেহ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ৮ জানুয়ারি রনজিৎ-এর স্ত্রী রিতা দে বাদী হয়ে বালিয়াকান্দি থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর থেকেই হত্যার কারণ উদ্‌ঘাটন ও আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর ছিল। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা মুক্তারকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।

পুলিশ সুপার বলেন, মূলত মুক্তারের শ্বশুরবাড়ি চর আড়কান্দি গ্রামে। নিয়মিত শ্বশুরবাড়িতে যাতায়াতের সুবাদে ওই গ্রামের দু’জন ব্যক্তির সঙ্গে মুক্তারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়। তারা তিনজন মিলে একসঙ্গে মাদক সেবন করতেন। তাদের মধ্যে একজনের ইজিবাইক রয়েছে। ৫ জানুয়ারি রাতে তারা একসঙ্গে মাদক সেবনের পর চর আড়কান্দি গ্রামের ফিরোজ ও হারুনের বাড়ি থেকে দুটি ছাগল চুরি করে অটোরিকশাযোগে চর আড়কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে কাঠবাগানে নিয়ে যায়।

যেহেতু নির্বাচন উপলক্ষে পুলিশি টহল বেশি ছিল। যে কারণে ওই বাগানের মধ্যে তারা ভোর হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। তারা জানতেন না ওই স্কুলে গ্রাম পুলিশ ভোটকেন্দ্র পাহারায় রয়েছে। গ্রাম পুলিশ রনজিৎ প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে বাগানের মধ্যে গিয়ে টর্চের আলোতে তিন চোরকে চিনে ফেলেন। এসময় তারা রনজিৎকে ১০ হাজার টাকা দিবে বলে লোভ দেখায়। একপর্যায়ে তারা রনজিৎকে দুই হাজার টাকাও দেয়। তবে রনজিৎ টাকা না নিয়ে থানায় ফোন করে পুলিশ আনতে চান। এসময় তারা তিনজন মিলে রনজিৎ এর গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এরপর তারা রনজিৎ-এর গলায় মাফলার পেঁচিয়ে মরদেহ ২০০ মিটার দুরে টেনে নিয়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে ছাগল দুটি তারা হাটে বিক্রি করেন।  হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি মুক্তারকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি হত্যার কাজে ব্যবহৃত ইজিবাইক ও চুরি হওয়া একটি ছাগল আমরা জব্দ করতে পেরেছি। আরেকটি ছাগল চট্টগ্রাম নিয়ে জবাই করার কারণে সেটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। হত্যার সঙ্গে জড়িত বাকী দুজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *