আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নৈতিকতা প্রদর্শন করে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সংবিধিবদ্ধ স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে জনগণের কাছে দুদকের জবাবদিহি থাকা উচিত।’
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা অডিটরিয়ামে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এই আহ্বান জানান। দুদককে জনগণের নির্ভরতা ও আস্থার স্থলে পরিণত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনেরও আদেশ দেন তিনি।
দুদককে একটি আধুনিক, পেশাদার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আপনার বা আপনাদের কোনও ভুল পদক্ষেপে যেন কোনও নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হন, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশপ্রেম, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশ ও জনগণের সেবায় সর্বাত্মক প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে এবং দুদককে জনগণের নির্ভরতা ও আস্থার স্থলে পরিণত করতে হবে।’
সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘একজন দুর্নীতিবাজের পরিচয় কেবলই দুর্নীতিবাজ। দুর্নীতিবাজদের কোনও দল নেই, নীতি-আদর্শ নেই। তাই দুর্নীতিবাজরা যে দলেরই হোক, দুর্নীতি করলে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনতে হলে দুদককে আরও কৌশলী হতে হবে, প্রশিক্ষিত ও প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে।’
বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের সঙ্গে দুর্নীতিবাজদের কৌশলও বদলেছে উল্লেখ করে মো. সাহাবুদ্দিন আরও বলেন, ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দেশে-বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য দুদককে নির্দেশ দেন তিনি। রাষ্ট্রপতি প্রত্যাশা করেন
যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে রূপকল্প-২০৪১, শত বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়ন এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে দুদক অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দুদক তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব কোনও অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে নির্মোহ ও নিষ্ঠার সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে পালনের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারলেই আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালন স্বার্থক হবে। সংবিধিবদ্ধ স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে জনগণের কাছে দুদকের জবাবদিহি থাকা উচিত।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, জনগণ আশা করে— ‘দুর্নীতি দমন কার্যক্রমে কমিশনের সব পর্যায়ের কর্মচারীরা সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতা প্রদর্শন করবেন। দুর্নীতি শুধু বাংলাদেশের নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা এবং পৃথিবীর কোনোদেশই এর কুপ্রভাব থেকে সম্পূর্ণমুক্ত নয়। দুর্নীতি সমাজে বৈষম্যের সৃষ্টি করে, অর্থনৈতিক বিকাশ ও উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই দুর্নীতি দমন করতে
হলে পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে। পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষা এবং ধর্মীয় অনুভূতিও দুর্নীতি রোধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।’ তিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে সে জন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বব্যাপী প্রতিরোধ গড়ে তোলারও তাগিদ দেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তখন পদ্মা সেতু নিয়ে অসত্য কেলেঙ্কারির ঘটনাসহ বিভিন্ন বিষয়ের স্মৃতিচারণ করেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘তাইতো দুর্নীতি দমন কমিশনের সফলতায় আনন্দিত হই, আবার ব্যর্থতায় ব্যথিত হই।’ রাষ্ট্রপতি দুদকের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে
প্রত্যেককে আইন সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। দাফতরিক ও আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি দুর্নীতি কমাতে সমাজের সব স্তরে জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন— প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক, কমিশনার মোছা. আছিয়া খাতুন এবং কমিশনের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।