বাংলাদেশিরা যে পানি পান করছেন, তার প্রায় অর্ধেকের মধ্যেই রয়েছে ভয়াবহ উচ্চমাত্রার আর্সেনিক। নতুন এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে বলে খবর ইনডিপেন্ডেন্টের।বিজ্ঞানীদের একটি দল গবেষণায় দেখতে পেয়েছে, ৪৯ শতাংশ পানিতেই অনিরাপদ মাত্রায় ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান রয়েছে। এ পানির ওপর দেশটির জনসংখ্যার সিংহভাগই নির্ভরশীল।
এ আবিষ্কার দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে জনস্বাস্থ্য সংকটকে সামনে নিয়ে এসেছে। দেশটি নিয়মিতভাবে বড় বন্যার সম্মুখীন হয়।এটি জলবায়ু সংকটের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
২০১৮ সালে ঘূর্ণিঝড়ের আম্পানের পর বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ পানিতে নিমজ্জিত হয়।
বর্ষার তীব্র বৃষ্টিপাতের কারণে বছরে গড়ে দেশের ২১ শতাংশ অঞ্চলে বন্যা হয়।
প্লাস ওয়ান নামে জার্নালে বুধবার প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, আর্সেনিকের বর্ধিত মাত্রা সরাসরি ক্রমবর্ধমান সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এবং আরও তীব্র মৌসুমি বন্যার সঙ্গে সম্পর্কিত।
যখন সমুদ্রের নোনা পানি মিঠা পানির সঙ্গে মিশে যায়, তখন পলি থেকে আর্সেনিক নির্গত হয়। গবেষকরা আর্সেনিক নিঃসরণের পেছনের কারণ বোঝার জন্য অক্সিজেনের ঘনত্ব, পিএইচ এবং তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন কূপ থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করেন।
গবেষকরা দেখতে পান, বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ পানির প্রায় ৪৯ শতাংশে আর্সেনিকের ঘনত্ব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত নিরাপদ সীমা ১০ মাইক্রোগ্রাম/লিটার ছাড়িয়ে গেছে
কিছু নমুনায় দেখা গেছে, পানিতে আর্সেনিকের ঘনত্ব প্রতি লিটারে ৪৫০ মাইক্রোগ্রাম, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত সীমার চেয়ে ৪৫ গুণ।
এ সংকট শুধু বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়। গবেষণার লেখক নরউইচ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সেথ ফ্রিসবি বলেন, দীর্ঘস্থায়ী আর্সেনিক বিষক্রিয়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদেরও প্রভাবিত করছে।
আর্সেনিক বিষের প্রভাব বাংলাদেশে আবিষ্কৃত হওয়ার ১১ বছর আগে উপমহাদেশে প্রথম পশ্চিমবঙ্গেই শনাক্ত হয়েছিল।
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশেই আর্সেনিকের জন্য পানীয় জলের নির্ধারিত মান অনেক দশক পুরোনো, যা জনগণকে আরও ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে।
গবেষণার ফল জনস্বাস্থ্যের জন্য এক জরুরি সংকেত। আর্সেনিকের দীর্ঘ প্রভাব ক্যানসার, রক্তনালির রোগসহ গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।