স্বেচ্ছাশ্রমে এগিয়ে চলেছে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান প্রস্তুত করার কাজ

বিশ্ব ইজতেমা ময়দান

আগামী ২ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের টঙ্গীতে তুরাগ নদীর তীরে শুরু হচ্ছে তাবলিগ জামাতের বার্ষিক মহাসম্মেলন ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এবারও দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব ইজতেমা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে এসে দলে দলে ভাগ হয়ে স্বেছাশ্রম দিচ্ছেন। সামিয়ানা টানানো, রাস্তাঘাট মেরামত, নিচু জমি ভরাট ও পয়োনিষ্কাশন কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। তাবলিগ-জামাতের অনুসারী, স্থানীয় মাদ্রাসা-স্কুল-কলেজের ছাত্র-শিক্ষক, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ইজতেমা মাঠে স্বেচ্ছাশ্রমে এসব কাজ করছেন।

এবারের ইজতেমায় প্রথম পর্বে অংশ নেবেন মাওলানা জোবায়ের অনুসারী মুসল্লিরা। ৪ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্ব। এরপর চার দিন বিরতি দিয়ে মাওলানা সাদ অনুসারীরা ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নেবেন। ১১ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ বছরের বিশ্ব ইজতেমা।টঙ্গী ইজতেমা ময়দানের বয়ান মঞ্চের জিম্মাদার হাজী মোহাম্মদ রেজাউল করিম রেজা বলেন, বিশ্ব ইজতেমায় এবার টঙ্গীর তুরাগ তীরের পাশাপাশি নদীর পশ্চিম পার ও উত্তরার দিয়াবাড়িতে মূল প্যান্ডেল হচ্ছে। টঙ্গীর মূল মঞ্চের পাশাপাশি দিয়াবাড়িতে আরেকটি মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে। তবে টঙ্গীতে অবস্থিত মূল মঞ্চ থেকে দিয়াবাড়ি মঞ্চে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বয়ান প্রচারিত হবে। দুই ময়দান থেকে মুসল্লিরা বয়ান ও আখেরি মোনাজাতে শরিক হবেন। দিয়াবাড়িতে ৬০ একর জায়গায় বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় মাঠ। তবে পৃথকভাবে ইজতেমা ময়দানের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হবে। অতিরিক্ত মুসল্লির ভিড় সামলাতে ও দুর্ভোগ কমাতে এই আয়োজন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ধর্মপ্রাণ লোকজন এসে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে নানা রকম কাজ ও সহায়তা করছেন

শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে ইজতেমা মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, তুরাগ তীরে প্রায় ১৬০ একর জমির ওপর তাবলিগ জামাতের সদস্যদের থাকার জন্য বিশাল চটের প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। ইজতেমা মাঠের উত্তর-পূর্ব ও পশ্চিম পাশের নিচু জমিতে বালু ফেলে উঁচু করা হয়েছে। মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য তুরাগ নদে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা ভাসমান পন্টুন সেতু নির্মাণ করছেন। মাঠে অবস্থানের জন্য জেলাওয়ারি নির্দিষ্ট খিত্তায় (ভাগে) বিভক্ত করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ লাইন, গ্যাস লাইন, পানির পাইপ লাইন, পানির ট্যাংক বসানো, বাঁশের খুঁটি বসানো, নামাজের দাগ কাটা, মাঠের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারসহ প্যান্ডেল সাজগোছের কাজ করা হচ্ছে।

মঞ্চ নির্মাণ, মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে টিনের চালা ও ইটের গাঁথুনির দেওয়াল দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বিদেশি মেহমানদের আবাসন ব্যবস্থা। মুসল্লিদের সুবিধার্থে খাবার পানি, অজুখানা, গোসলখানা সংস্কার, পুরোনো টিউবওয়েল, বাথরুম ও কাঁচা-পাকা টয়লেট সংস্কার, ইটের সলিং দিয়ে রাস্তা তৈরি ও ড্রেন সংস্কার করা হয়েছে।

দুই দিন আগে রংপুরের পীরগাছা থেকে এসছেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আল্লাহর কাজে এসেছি। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তার বান্দাদের খেদমত করার জন্য ইজতেমা মাঠে স্বেচ্ছায় শ্রম দিচ্ছি।

শুক্রবার সকালে ইজতেমা মাঠে স্বেচ্ছায় শ্রম দেওয়ার জন্য ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া থেকে আমীর হোসেন। তিনি বলেন, আমি প্রতি বছরই ইজতেমা শুরু হওয়ার সাত দিন আগে ইজতেমা ময়দানে স্বেচ্ছায় কাজ করতে আসি। যতদিন বেঁচে থাকব ততদিনই ময়দানের কাজ করে যাব। এবাদত বন্দেগীর পাশাপাশি আল্লাহকে খুশি করার জন্য কাজ করছি।মঞ্চ নির্মাণের কাজে নিয়োজিত আলমগীর হোসেন বলেন, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে মঞ্চ নির্মাণের কাজ শেষ হবে। বিদ্যুতের দায়িত্বে নিয়োজিত আব্দুল মমিন বলেন, বিভিন্ন খুঁটিতে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হছেছে। আশা করি আগামী দুই দিনের মধ্যেই সব কাজ শেষ হবে। ইজতেমা ময়দানের অভ্যন্তরে রাস্তা মেরামত কাজ করছেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিদেশি মেহমানরা স্বাচ্ছন্দ্যে বয়ান মঞ্চে যাওয়ার জন্য সয়েলিংয়ের কাজ করছি।

ইজতেমার বিদেশি মেহমানদের জিম্মাদার আমির হোসেন বলেন, বিদেশি মেহমানদের থাকা-খাওয়াসহ সব ধরনের ব্যবস্থা প্রায় শেষ। আয়োজকেরা আশা করছেন এবার ৬০ লাখ মানুষ একসঙ্গে আখেরি মোনাজাতে শরিক হবেন।

বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী (মাওলানা জোবায়ের অনুসারী) মুফতি জহির ইবনে মুসলিম বলেন, স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এগিয়ে চলছে ইজতেমার প্রস্তুতি কাজ। ইতোমধ্যে ময়দানের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যেই বাকি কাজ শেষ হবে।টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার প্রধান সমন্বয়কারী প্রকৌশলী মাহফুজ হান্নান বলেন, এবার বিশ্ব ইজতেমায় ১০৫টি খিত্তা থাকবে। টঙ্গীর মূল মঞ্চে ৭২টি, টঙ্গীর তুরাগ তীরের পশ্চিম পারে ১০টি ও উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টরে দিয়াবাড়ি মাঠে ২৩টি খিত্তা থাকবে। দিয়াবাড়িতে এবার নতুনভাবে মাঠ প্রস্তুত করায় বেশ কিছু কাজ করা হচ্ছে। দিয়াবাড়ি ময়দানে ৮টি গভীর নলকূপ, ১৪টি বড় চৌবাচ্চা ও দুই হাজার ৫০০ টয়লেট নির্মাণ করা হচ্ছে।

দিয়াবাড়ি ইজতেমা ময়দানের জিম্মাদার মাওলানা ফরিদ আহমদ দিয়াবাড়ি ময়দানের প্রস্তুতি কাজ সম্পর্কে বলেন, ইতোমধ্যে ময়দান প্রস্তুত করার কাজ শেষ পর্যায়ে। টঙ্গী ইজতেমা মাঠে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় দুটি ময়দান করা হয়েছে। তবে টঙ্গী ইজতেমা মাঠের মূল মঞ্চ থেকে বয়ান সরবরাহ করে দিয়াবাড়িতে শোনানো হবে। আখেরি মোনাজাতও বয়ানের মতো সরবরাহ করা হবে। টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে ১০ লাখ, তুরাগ নদীর পশ্চিম পারে ১ লাখ ও দিয়াবাড়িতে ২ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণসহ আখেরি মোনাজাতে প্রায় ৬০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

২০১১ সালে প্রথম বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে প্রতি বছর দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবারই প্রথম দুই ময়দানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা।

ছবি: গাজীপুর প্রতিনিধি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *