দুটি জাতের ফুলকপির একটি ভ্যালেন্টিনা পিংক ও আরেকটি ক্যারোটিনা ইয়েলো
সবজি নিয়ে নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা কৃষক মো. আমিন উদ্দিন (৪৩) এবার চাষ করেছেন নতুন জাতের দুটি ফুলকপি। দেখতে ব্যতিক্রমী এই ফুলকপির একটি পিংক আরেকটি হলুদ। প্রথমবার চাষাবাদেই সফল হয়েছেন এই কৃষক।
জেলা কৃষি অফিস বলছে, দুটি জাতের ফুলকপির একটি ভ্যালেন্টিনা পিংক ও আরেকটি ক্যারোটিনা ইয়েলো। বছর চার আগে যশোর সদরের পোলতাডাঙ্গা গ্রামের চাষি আমিন উদ্দিন ব্রকলি চাষ করে তাক লাগিয়ে দেন। মাত্র কয়েক শতক জমিতে এসব ব্যতিক্রমী ফসল চাষ করে অধিক মুনাফা অর্জন করেন এই চাষি। পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমে নিজে চাষ করেন, একইসঙ্গে আশপাশের আরও দুই-একজনকে বীজ বা চারা সরবরাহ করেন। এতে তারাও স্বাবলম্বী হনবুধবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে পোলতাডাঙ্গা গ্রামে আমিনের ক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে, সবুজ পাতার আড়ালে ফুটে আছে কয়েকশ রঙিন ফুলকপি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভ্যালেন্টিনা পিংক অর্থাৎ গোলাপি রঙের কপি। পাশাপাশি দেখা গেলো ছোট আকারের অর্ধশতাধিক ক্যারোটিনা ইয়েলো অর্থাৎ হলুদ কপি। ইতোমধ্যে ভ্যালেন্টিনা বাজারজাত করেছেন। তবে ক্যারোটিনা আকারে ছোট হওয়ায় আগামী সপ্তাহে বিক্রির উপযোগী হবে।
কয়েক শতক জমিতে এই জাতের কপি চাষ করেছেন এই কৃষক
আমিন উদ্দিন মূলত সবজির চারা বিক্রেতা। যশোর-চৌগাছা সড়কের পাশে আব্দুলপুর মোড়ে রয়েছে তার নার্সারি। সেখানে উৎপাদন করেন বিভিন্ন জাতের বেগুন, মরিচ, টমেটো, লাউ ও কপির চারা। চলতি মৌসুমে বেশ ভালো দামে বিভিন্ন চারা বিক্রি করেছেন
কোথা থেকে এলো?
গত বছরের মাঝামাঝিতে ভারত থেকে ভ্যালেন্টিনা পিংক ও ক্যারোটিনা ইয়েলো জাতের ফুলকপির বীজ এনেছেন বলে জানালেন আমিন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি প্যাকেটে ৫০০ পিস বীজ থাকে, প্রতিটি প্যাকেটের দাম পড়েছে ১১০০ টাকা। পাঁচ হাজার বীজ এনেছিলাম। নিজের জন্য দুই হাজার ভ্যালেন্টিনা ও ৪০০ ক্যারোটিনা বীজ রেখে চারা উৎপাদন করেছি। বাকি বীজ আশপাশের কৃষকদের দিয়েছি।’
কত দিনে বিক্রির উপযোগী হয়?
চারা রোপণের ৭০ দিনের মাথায় ফসল বিক্রির উপযোগী হয় উল্লেখ করে আমিন উদ্দিন বলেন, ‘ভ্যালেন্টিনা পিংক ও ক্যারোটিনা ইয়েলোর প্রতিটি চারা পাঁচ টাকা করে বিক্রি করেছি। সাধারণত ফুলকপির মতোই পরিচর্যা করতে হয়। ভ্যালেন্টিনার ওজন দুই থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত হয়। সাধারণ ফুলকপির চেয়ে এগুলোর দাম বেশি। ফুলকপি যখন বাজারে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়, ভ্যালেন্টিনা বিক্রি করেছি ৭০ টাকায়। বর্তমানে ফুলকপি ২৫ টাকা আর ভ্যালেন্টিনা বিক্রি করছি ৪০ টাকা দরে। ক্যারোটিনা এখনও বাজারজাতকরণের উপযোগী হয়নি। তবে দুই দিন আগে একটি বাজারে নিয়েছিলাম, বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা কেজি দরে। সেটির ওজন হয়েছিল এক কেজি ২০০ গ্রাম। এই জাতের ফুলকপি দেখতে সবচেয়ে সুন্দর।’
নতুন জাতের সবজি চাষে সফল
অল্প জমিতে দামি সবজি চাষ করে একই সময়ে বেশি লাভবান হওয়ার প্রয়াস থাকে জানিয়ে এই কৃষক বলেন, ‘আগে মাঝেমধ্যে ভারতে বেড়াতে যেতাম। সেখানে চাষকৃত নতুন জাতের সবজির উৎপাদন ও বাজারমূল্য যাচাই করে সেসব বীজ আনতাম। একবার কলকাতায় সাম্মাম (ধূসর রঙের একপ্রকার ফল, এটি তরমুজের মতো) নামে একটি ফল খেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। ফলটি পাকলে ভেতরটা পাকা পেঁপের মতো হয়। খেতেও সুস্বাদু। দেশে আসার সময় বীজ নিয়ে আসি। পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন করি। ফলনও ভালো, বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছি এখন। পরেরবার কাকড়ি নামে এক ধরনের শসা দেখে বীজ আনি, চাষও করেছি। এই শসার বৈশিষ্ট্য হলো আড়াই হাতের মতো লম্বা হয়। স্থানীয় লোকজন বিস্মিত হলেও কেউ সেগুলো কিনতে রাজি হননি। তেমনিভাবে নতুন জাতের স্কোয়াশ ও ক্যাপসিকাম চাষ করেছি। তবে ক্যাপসিকামের ফলন ভালো ছিল না। ফলগুলো কুঁকড়ে যায় এবং গ্রোথ ঠিকমতো ছিল না। কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু তাদের পরামর্শ পছন্দ হয়নি বলে সেগুলো আর চাষ করিনি।’
এই কপিতে প্রচুর ক্যারোটিন ও আয়রন
নতুন জাতের ফুলকপি চাষের বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী বলেন, ‘ভ্যালেন্টিনা পিংক ও ক্যারোটিনা ইয়েলো জাত দুটি ভারতীয়। যশোর সদরে দুই হেক্টর জমিতে এই জাতের ফুলকপি চাষ হয়েছে। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এই কপিতে প্রচুর ক্যারোটিন ও আয়রন আছে। এছাড়া এই সবজির দাম বেশি হওয়ায় অল্প জমিতে চাষাবাদ করে কৃষকরা লাভবানও হতে পারেন সহজে। পরীক্ষামূলক চাষ করা এই কপিসহ অন্যান্য সবজি চাষে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি আমরা।’