ঢাকা: ধরুন, আপনার কণ্ঠ নকল করে আপনারই স্বজনদের কাছে কল যাচ্ছে- আপনি বিপদে পড়েছেন, আপনার উদ্ধারের জন্য টাকার প্রয়োজন। আপনার অজান্তে আপনার স্বজন বিপরীত দিক থেকে আসা কলের তথ্যানুযায়ী টাকা পাঠিয়ে দিল! এআই ব্যবহার করে প্রতারণার এমন ফাঁদ পেতেছেন প্রতারকরা।এই এআই তথা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যুগে আমাদের বসবাস। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দৈনন্দিন অনেক কিছুই সহজ হয়ে গেছে।
তবে চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে এই প্রযুক্তি। বিশেষ করে অপব্যবহারকারীরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছেন।পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটেও এমন অপরাধের অভিযোগ জমা পড়ছে। কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনেছে।
তবে এমন অনেক ঘটনাই আড়ালে থেকে যাচ্ছে।
তথ্য প্রযুক্তিবিদ এবং পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ বলছে, এমন অপরাধ থেকে মুক্ত থাকতে সচেতনতার পাশাপাশি অপরিচিত নাম্বার বা লিংক থেকে কল আসলে তা ভেরিফাই করে সাড়া দিতে হবে।
পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ বলছে, এআই ব্যবহার করে অপরাধী চক্র অপরিচিত নম্বর, ফিশিং লিংক বা ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে সুকৌশলে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে টার্গেট করে। এরপর তারা কণ্ঠ হুবহু নকল করে স্বজনদের কাছে সেই লিংক পাঠিয়ে কল করে প্রতারণা করে।
ইন্টারনেট নীতি প্রণয়ন, সাইবার নিরাপত্তা, ইন্টারনেট গভর্নেন্সের মত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেছেন সুমন আহমেদ সাবির। আর বর্তমানে ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি সেবাদাতা কোম্পানি ফাইবার অ্যাট হোমের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা তিনি।
সুমন আহমেদ সাবির বাংলানিউজকে বলেন, এআই দিয়ে কণ্ঠ হুবহু নকল করা যায়। তবে এটা ভয়ের বিষয় যে স্বজনদের কাছে কল করে প্রতারণা। এ থেকে আমাদের রক্ষা পেতে সতর্কতা বাড়াতে হবে
তিনি বলেন, সাধারণত আন-নোন সোর্স থেকে কল করে এমন প্রতারণা করা হয়। তেমন কল এলে ভেরিফাই করে কথা বলতে হবে। প্রতারণা বা কোনো লোভনীয় অফার সংক্রান্ত কলে অবশ্যই ভেরিফাই করতে হবে।
বর্তমানে এআই প্রযুক্তি দিয়ে অনেক কিছুই করা সম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন, কোন কাজে এআই প্রযুক্তি কতটুকু ব্যবহার করব সেটা বড় বিষয়।
কণ্ঠ নকল করে স্বজনদের কাছে কল যাওয়া এবং প্রতারণার অভিযোগ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছেও এসেছে।
ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. নাজমুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এমন হয়ে থাকে যে অবিকল কণ্ঠ নকল করে কল করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে একটা চ্যানেল ব্যবহার করতে হয়। বিভিন্ন ফিশিং লিংক বা ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে এটা ছড়াতে পারে। এরকম হয়ে থাকলে সে চ্যানেল বা লিংকসহ থানায় আসতে হবে অভিযোগ জানাতে হবে
তিনি বলেন, এআই প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। মেশিন লার্নিং টুলস ব্যবহার বাড়াতে হবে যাতে ফিশিং লিংক ছড়াতে না পারে বা কোনগুলো ফিশিং লিংক তা বের করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের বিষয় আমাদের কাছে এসেছে। আমরা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিয়েছি। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সমন্বয়ে কনসোর্টিয়াম গঠন করা যেতে পারে। পুলিশ, জনগণ এবং সাইবার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে সচেতনতামূলক কাজ করতে হবে। অর্থাৎ, সরকারি-বেসরকারি সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নিয়ে এমন সাইবার অপরাধ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে