জাপার দুর্গ বলে খ্যাত রংপুরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ (সদর) আসনে মনোনয়ন নিয়ে দলের মধ্যে টানাপেড়েন শুরু হয়েছে। জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের নিজে চান এ আসনে নির্বাচন করতে। অন্যদিকে রওশন এরশাদ চান তার ছেলে বর্তমান সংসদ সদস্য সাদ এরশাদের মনোনয়ন।
তবে জাতীয় পার্টির রংপুরের নেতাকর্মীরা কোনও অবস্থাতেই সাদকে মনোনয়ন না দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তারা জানিয়ে দিয়েছেন, জি এম কাদেরকে ছাড়া সাদ এরশাদকে প্রার্থী করলে কোনও অবস্থাতেই গ্রহণ করবেন না। তাতেই শুরু হয়েছে রওশন-কাদের টানাপোড়েন
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কাছে রংপুরের ছয়টি আসনের মধ্যে তিনটি আসন চেয়েছে জাতীয় পার্টি। রংপুর-১, ২ ও ৩ আসনে যেন আওয়ামী লীগ কোনও প্রার্থী না দেয়, সে ব্যাপারে দাবি জানিয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
চমক এখানেই শেষ নয়। জিএম কাদের ও রওশন এরশাদের দ্বন্দ্বের আরেক পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন জাপার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দল থেকে বহিষ্কৃত মসিউর রহমান রাঙ্গা। তাকে বাদ দিয়ে রওশন এরশাদ ছেলে সাদসহ তিন জনের নামে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পাঠিয়েছেন। এ কারণে শেষ পর্যন্ত তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার কথা জানিয়েছেন।
জাতীয় পার্টির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে রংপুর জেলা জাতীয় পার্টি রংপুরের ছয়টি আসনে তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এর মধ্যে রংপুর-১ আসনে জিএম কাদেরের আপন ভাতিজা আসিফ শাহারিয়ার, রংপুর-২ আসনে আনিস মন্ডল, রংপুর-৩ আসনে জিএম কাদের, রংপুর-৪ আসনে সেলিম বেঙ্গল, রংপুর-৫ আসনে রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজারের ছোট ভাই আনিসুর রহমান, রংপুর-৬ আসনে নুর আলম যাদু।
ইতিমধ্যে জি এম কাদের রংপুর-৩ আসনে নির্বাচন করার জন্য রংপুর নির্বাচন কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তার পক্ষে ফরম নিয়েছেন জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক আজমল হোসেন লেবু। তিনি ফরম কেনার পর বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
এ ব্যাপারে আজমল হোসেন লেবু শনিবার রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের মনোনয়ন পত্রে স্বাক্ষর করার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তাকে দেবেন। তিনি সেটি নিয়ে রংপুরে আসবেন। মূলত এ জন্যই ঢাকায় অবস্থান করার কথা জানান।
রওশন এরশাদ প্রথম দিকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ না করলেও, শেষ পর্যন্ত নিজে, ছেলে ও অন্য এক নেতার জন্য মোট তিনটি ফরম দলীয় কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করিয়েছেন। তবে রংপুর-৩ আসনে যেহেতু তার ছেলে বর্তমান সংসদ সদস্য, তাকে যেন আবারও ওই আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়, এ নিয়ে জি এম কাদেরের সঙ্গে দর-কষাকষি চলছে বলে নিশ্চিত করেছেন দলের একাধিক নেতা।
এদিকে রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সব নেতাই কোনও অবস্থাতেই সাদ এরশাদকে রংপুর-৩ আসনে প্রার্থী হিসেবে গ্রহণ করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন জি এম কাদেরকে।
এ ব্যাপারে জাপার নবনির্বাচিত কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেছেন, সাদ এরশাদ নন, জি এম কাদেরকেই রংপুরের জনগণ এবং দলের শতভাগ নেতাকর্মী প্রার্থী হিসেবে চান। এই ব্যাপারে আমরা অন্য কোনও সিদ্ধান্ত মেনে নেবো না।
একই কথা বললেন জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক। তিনি শনিবার রাতে জানিয়েছেন, রংপুর-৩-এ জিএম কাদেরকে ছাড়া সাদ এরশাদকে প্রার্থী করলে কোনও অবস্থাতেই গ্রহণ করবেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার রংপুরের দায়িত্বশীল দুজন নেতা জানান, জি এম কাদের নিজেও চান রংপুর-৩ আসনে নির্বাচন করতে। কারণ এ আসনে তিনি নির্বাচন করলে নিশ্চিতভাবে জয়ী হবেন। কিন্তু দেবর-ভাবির এমন দ্বৈরথে রংপুর-৩ আসন নিয়ে আবারও নতুন মোড় নিতে পারে বলে মনে করছেন দলের নেতারা।
জাপার একটি সূত্র জানিয়েছে, রবিবার (২৬ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রওশন এরশাদের দেখা করার কথা থাকলেও দেখা করেননি। সোমবার বা মঙ্গলবার দেখা হতে পারে বলে জানা গেছে। তবে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চেয়েছেন জি এম কাদের।
উল্লেখ্য, রওশন এরশাদের পক্ষ নেওয়া দল থেকে আগেই বহিষ্কৃত হয়েছেন মসিউর রহমান রাঙ্গা। কিন্তু তার পক্ষ না নেওয়ায় তিনি রওশন এরশাদের প্রতি চরম নাখোশ হয়েছেন বলে জানা গেছে।
রওশন এরশাদ নিজে ও ছেলে সাদসহ তিন নেতার জন্য দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পাঠিয়েছেন। সেখানে রাঙ্গার নাম না শোনা যায়নি। শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) রাঙ্গার মেয়ে দলের প্রধান কার্যালয়ে জি এম কাদেরের সঙ্গে দেখা করে পৌনে এক ঘণ্টা অবস্থান করেও বাবার জন্য দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। এরপরই রংপুর-১ আসন থেকে রাঙ্গা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।