মধ্যম পন্থা অবলম্বন করাই উত্তম

ইসলাম ডেস্ক

মধ্যম পন্থা একটি পরিচিত শব্দ। শব্দটি আমরা প্রায়ই শুনে থাকি।

ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বনের কথা বলা হয় বিশেষভাবে।

প্রশ্ন হলো- এই মধ্যম পন্থা আসলে কী? এ বিষয়ে ইসলামি স্কলাররা বলেন, মানুষ দ্বীনের মধ্যে কোনো কিছু বাড়াবে না।

যাতে সে আল্লাহর নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে ফেলে। এমনিভাবে দ্বীনের কোনো অংশ কমাবে না।যাতে সে আল্লাহর নির্ধারিত দ্বীনের কিছু অংশ বিলুপ্ত করে দেয়।

হজরত নবী করিম (সা.)-এর জীবন অনুসরণ করা দ্বীনের মধ্যে মধ্যম পন্থা অবলম্বনের অন্তর্ভুক্ত।

তার জীবনাদর্শ অতিক্রম করা দ্বীনের ভেতরে অতিরঞ্জনের শামিল। নবীর জীবন অনুসরণ না করা, তাকে অবহেলা করার অন্তর্ভুক্ত। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, একজন লোক বলল- আমি আজীবন রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ব। রাতে কখনও ঘুমাব না। কারণ নামাজ সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। তাই আমি নামাজের মাধ্যমে বাকী জীবনের রাতগুলো জাগরণ করতে চাই।  

আমরা ওই ব্যক্তির এমন কাজের প্রেক্ষিতে বলবো, সে দ্বীনের মাঝে অতিরঞ্জিতকারী, সে হকের ওপর নেই। নবী করিম (সা.)-এর যুগে এমন হয়েছিলো। তিন জন লোক একত্রিত হয়ে একজন বলল, আমি সারা রাত নামাজ আদায় করব। আরেকজন বলল, আমি সারা বছর রোজা রাখব এবং কখনও তা ছাড়ব না। তৃতীয় জন বলল, আমি স্ত্রী সংসর্গে যাবো না।

নবী করিম (সা.)-এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি বললেন, একদল লোকের কি হলো- তারা এমন কথা বলে? অথচ আমি রোজা রাখি

এবং কখনও রোজা থেকে বিরত থাকি। রাতে ঘুমাই এবং আল্লাহর ইবাদত করি। স্ত্রীদের সঙ্গেও মিলিত হই। এটি আমার সুন্নত। সুতরাং যে ব্যক্তি, আমার সুন্নত থেকে বিমুখ থাকবে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।

এই লোকেরা দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করার কারণে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নতার ঘোষণা করলেন। কেননা তারা রোজা রাখা না রাখা, রাত্রি জাগরণ করা, ঘুমানো এবং স্ত্রী সহবাস করার ক্ষেত্রে তার সুন্নতকে প্রত্যাখ্যান করতে চেয়েছিল।

দ্বীনী বিষয়ে যে ব্যক্তি অবহেলা করে বলবে যে, আমার নফল ইবাদতের দরকার নেই। শুধু ফরজ ইবাদতগুলো পালন করব। আসলে সে ব্যক্তি ফরজ আমলেও অবহেলা করে থাকে। সঠিক পথের অনুসারী হলো- সেই ব্যক্তি, যে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নতের ওপর চলবে।

এক্ষেত্রে আমার উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, মনে করুন তিন জন ভালো লোকের পাশে রয়েছে একজন ফাসেক। তিনজনের একজন বলল, আমি এই ফাসেককে সালাম দেব না। তার থেকে দূরে থাকব এবং তার সঙ্গে কথা বলব না। অপর জন বলল, আমি তার সঙ্গে চলব, তাকে সালাম দেব, হাসিমুখে তার সঙ্গে কথা বলব, তাকে দাওয়াত দেব এবং তার দাওয়াতে আমিও শরিক হব। আমার নিকট সে অন্য সৎ লোকের মতোই। তৃতীয়জন বলল, আমি এই ফাসেককে তার পাপাচারিতার কারণে ঘৃণা করি। তবে তার ভেতরে ঈমান থাকার কারণে আমি তাকে ভালোবাসি। তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করব না। কিন্তু তাকে সংশোধনের কারণে বর্জন করা হলে তা ভিন্ন কথা। তাকে বর্জন করলে যদি তার পাপাচারিতা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয়, তবে আমি তাকে বর্জন করব না।

এই তিনজনের প্রথম ব্যক্তি বেশিবাড়াবাড়ি করল। দ্বিতীয়জন ত্রুটি করল এবং তৃতীয়জন মধ্যম পন্থা ও সঠিক পথের অনুসরণ করল। বস্তুত সব ইবাদত ও মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রও অনুরূপ। মানুষ এতে ত্রুটি, বাড়াবাড়ি এবং মধ্যম পন্থা অবলম্বন করে থাকে। কিন্তু উত্তম হলো- সবক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *