নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে, বললেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরা

ইসির প্রশংসা

বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে মত দিয়েছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা। তবে নির্বাচন ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় তারা মর্মাহত। বড় রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে নির্বাচন পূর্ণ অংশগ্রহণমূলক হতো বলেও মনে করেন তারা। সফলভাবে ভোটের প্রক্রিয়া শেষ করায় নির্বাচন কমিশনকে তারা অভিনন্দন জানান।

রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে গতকাল রোববার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত আলাদা সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিমত তুলে ধরেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, রাশিয়া, ফিলিস্তিন, নাইজেরিয়া, গাম্বিয়া, ওআইসি, সাউথ এশিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোরামসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার পর্যবেক্ষকরা।গতকাল সারা দিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের কেন্দ্রে সরেজমিন ভোট গ্রহণ ও নির্বাচনী পরিবেশ দেখার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও তথ্য অধিদপ্তরের সহযোগিতায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ প্রতিক্রিয়া জানান। নিজ দেশে ফিরে এ পর্যবেক্ষণের মূল্যায়ন প্রতিবেদন দেবেন বলেও জানান। পৃথক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বেলজিয়ামভিত্তিক সংস্থা দক্ষিণ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরামের নির্বাহী পরিচালক ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) সাবেক সংসদ সদস্য পাওলো কাসাকা, রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনার অ্যান্দ্রে ওয়াই শুতভ, ফিলিস্তিনের প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা হিশাম কুহাইলি, সাবেক মার্কিন কংগ্রেসম্যান জিম বেটস, আমেরিকান গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিসের প্রধান নির্বাহী আলেক্সান্ডার বি গ্রে, কানাডীয় স্বাধীন পর্যবেক্ষক দলের সদস্য চন্দ্র আর্য এমপি ও সিনেটর ভিক্টর ওহ, ওআইসির নির্বাচন ইউনিটের প্রধান শাকির মাহমুদ বান্ডার, আরব পার্লামেন্টের সদস্য আবদিহাকিম মোয়াল্লিম এবং স্কটিশ সংসদ সদস্য মার্টিন ডে।

ইইউর সাবেক সংসদ সদস্য পাওলো কাসাকা নির্বাচনী সহিংসতা বন্ধ ও বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হওয়াকে দুঃখজনক হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, যারা নির্বাচন বয়কট করেছে, দ্রুত তাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসা উচিত।

বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নির্বাচন বর্জন প্রসঙ্গে তার মূল্যায়ন জানতে চাইলে পাওলো বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে সরকারকে চলে যেতে হবে, এটার মানে নেই। এটি মৌলিকভাবে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। সহিংসতার অবসান করে আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধানে গুরুত্ব দেন তিনি। পাওলো কাসাকা আরও বলেন, গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ অনেক দেশের থেকে এগিয়ে।

কম ভোটার উপস্থিতি প্রসঙ্গে সাবেক মার্কিন কংগ্রেসম্যান বলেন, বাংলাদেশে ভোট গ্রহণের সময় সবচেয়ে কম। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে আট ঘণ্টায় ভোট শেষ হয় না। এমনকি তার দেশেও না। সংক্ষিপ্ত সময়ে ভোট গ্রহণের এ প্রক্রিয়া অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলেই তিনি মনে করেন। দক্ষতার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা করা হয়েছে।

নির্বাচনে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা হয়েছে মন্তব্য করে রাশিয়ার অ্যান্দ্রে শুতভ বলেন, নির্বাচন স্বচ্ছ, উন্মুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য উপায়েই হয়েছে। ভোটের পরিবেশে নিরাপত্তা ছিল, এটা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। কোনো বিষয়ে তথ্যের অভাব ছিল না। সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে সংবাদ সংগ্রহ করেছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের দীর্ঘ ইতিহাসের কারণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া স্থিতিশীলভাবে অগ্রসর হচ্ছে। বহু মেরূকরণের দিকে অগ্রসরমান বিশ্বে জাতীয় স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এ দেশে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার অবস্থা নেই।

কানাডীয় স্বাধীন পর্যবেক্ষক দলের সদস্য চন্দ্র আর্য এমপি এবং সিনেটর ভিক্টর ওহ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঢাকায় আসার আগে থেকেই এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছি। কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচন বর্জন, প্রচার ও নির্বাচনকালীন কিছু সহিংসতাসহ বিভিন্ন বিষয় লক্ষ করেছি। এবার রেকর্ডসংখ্যক নারী প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রার্থীর পাশাপাশি তৃতীয় লিঙ্গেরও একজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। দিন শেষে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশন এবং দেশবাসীকে অভিনন্দন জানাই। এ ছাড়া ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর জন্য ইসির প্রচেষ্টার প্রশংসাও করেন তিনি।

ওআইসির নির্বাচন ইউনিটের প্রধান শাকির মাহমুদ বান্দার বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে গিয়েছি। ভোটার, প্রার্থী, এজেন্টসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। কোথাও সহিংসতা দেখেননি তিনি। পুরো শহর বেশ শান্ত ছিল। ভালো নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও পরিবেশ দেখে আমরা সন্তুষ্ট।

বাংলাদেশিদের নির্বাচনী পদ্ধতির জন্য গর্বিত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন ফিলিস্তিনের প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা হিশাম কুহাইলি। তিনি বলেন, এখানে ভোটদান পদ্ধতি সহজ-সরল। নির্বাচন পরিচালনাকারীরাও যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে স্কটিশ এমপি মার্টিন ডে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও ভোটারদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম ছিল।

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অনুশীলনের প্রশংসা করেন আরব পার্লামেন্টের সদস্য আবদিহাকিম মোয়াল্লিম। তিনি বলেন, নির্বাচন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন স্থানের কালবেলা প্রতিনিধিরা জানান, গতকাল ভোর থেকেই বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকরা রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট গ্রহণ ও নির্বাচনী পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন। ভারতের জ্যেষ্ঠ উপনির্বাচন কমিশনার ধর্মেন্দ্র শর্মা টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের বিভিন্ন কেন্দ্রে যান। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিশেষজ্ঞ মিশন ও ভারতীয় প্রতিনিধিদল গাজীপুর, কমনওয়েলথ প্রতিনিধিদল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, কানাডীয় প্রতিনিধিদল ঢাকা ও দোহার এবং নাইজেরিয়ার প্রতিনিধিদল নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখে। তারা ভোটার, প্রার্থী, এজেন্ট, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথাও বলেন। সে সময় তাদের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের কর্মকর্তারা ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *