ফ্যাক্টবক্স: শেখ হাসিনার বক্তব্যে নুহ নবির নৌকা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

আওয়ামী লীগ সভাপতি মূলত তার বক্তব্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে একই সুতোয় বুনতে চেয়েছেন

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়/ফাইল ছবি/ঢাকা ট্রিবিউন

সম্প্রতি সিলেটে নির্বাচনি জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, “এ নৌকা নূহ নবির নৌকা। এ নৌকায় কিন্তু মানবজাতিকে রক্ষা করেছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। এই নৌকায় ভোট দিয়ে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। আবার নৌকা যখন ক্ষমতায় এসেছে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে।”

এর আগেও বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে নুহ নবির নৌকা প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। নৌকা তার দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতীক। আবার ইসলাম ধর্মের ইতিহাসেও নবি নুহ (আ) এবং তার নৌকার গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মানবজাতি তথা গোটা সৃষ্টিকুলকে রক্ষায় নবির সেই নৌকার ভূমিকা বর্ণিত হয়েছে।

খ্রিস্ট ধর্মের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ বাইবেলেও এ সম্পর্কে বিবরণ পাওয়া যায়।

এদিকে, বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গেও আওয়ামী লীগ তথা নৌকার ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর অবিভক্ত পাকিস্তানের শেষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে ১৬২টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬০টি আসনে জয়লাভ করে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সেই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা মেনে না নিয়ে জুলফিকার আলী ভুট্টো নিজেকে পশ্চিম পাকিস্তানের নেতা হিসেবে দাবি করেন। ফলে শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান।

প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলন দমাতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। শুরু হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ।

পরবর্তী ইতিহাস স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস।

আওয়ামী লীগ সভাপতি মূলত তার বক্তব্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে একই সুতোয় বুনতে চেয়েছেন।

তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, যুগে যুগে নৌকা মানবজাতির ত্রাতা। প্রাচীন সেই মহাপ্লাবন অথবা পাকিস্তানিদের দুঃশাসন- বার বার মুক্তি এসেছে নৌকায় সওয়ার হয়েই।

নুহ নবির নৌকার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

ইসলামের ইতিহাস বলছে, পথভোলা মানুষকে সাজা দিতে আল্লাহ তখন গজব নাযিল করেন এবং তা থেকে পরিত্রাণের জন্য আল্লাহ নুহ নবীকে একটি নৌকা বানানোর নির্দেশ দেন। গজবের দিন নুহ নবি বিশ্বাসীদের আল্লাহর নাম নিয়ে নৌকায় চড়ে বসতে বললেন। নৌকা তাদের নিয়ে ভাসতে লাগল। প্রায় ৪০ দিন পর গজবের বর্ষণ থামলে নৌকারোহী মুমিন নর-নারীদের মাধ্যমে পৃথিবীতে নতুনভাবে আবাদ শুরু হয়। এ কারণে মুসলিমরা তাকে “মানব জাতির দ্বিতীয় পিতা” বলে অভিহিত করে থাকেন।

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে এভাবে- “তুমি একটি নৌকা তৈরি করো। এরপর যখন আমার আদেশ আসবে এবং চুল্লি প্লাবিত হবে, তখন নৌকায় তুলে নেবে প্রত্যেক জীবের একেক জোড়া এবং তোমার পরিবারবর্গকে, তাদের মধ্যে যাদের বিপক্ষে পূর্বে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাদের ছাড়া। এবং তুমি জালেমদের সম্পর্কে আমাকে কিছু বলবে না। নিশ্চয় তারা নিমজ্জিত হবে।” (সূরা মুমিনুন: আয়াত, ২৭)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *